‘নাপা খেয়ে’ অসুস্থ ঢাবি ছাত্রী, হল ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়ার জের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাবি ও ছাত্রলীগ লোগো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে বকাঝকা ও হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী কয়েকটি নাপা ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন বলে একটি ঘটনা সামনে আসে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত নাপা ঔষধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ওই শিক্ষার্থী সুফিয়া কামাল হলের সেক্রেটারি ব্লকের গণরুমে থাকেন এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী মালিহা সিনথিয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে। 

জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল হলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী সৈয়দা মেহেজাবীন সারা ভুক্তভোগীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে টিএসসিতে প্রোগ্রাম করতে আসেন। পরবর্তীতে এই ঘটনার জের ধরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ওই ছাত্রী ৭ থেকে ৮টি নাপা ওষুধ খান এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে সহপাঠীরা তাকে হল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে রাতেই হলে ফিরেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০২নং ওয়ার্ডের ভর্তি তালিকায় রাত ১টা ১০ মিনিটে ভুক্তভোগীকে ভর্তি করার তথ্য পেয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। 

ঘটনার শুরুতেই একটি কল রেকর্ড আসে ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে সেখানে ঐ শিক্ষার্থী বলেন, আমি সেক্রেটারি স্কোয়াডে থাকি এবং তানভীর হাসান সৈকত ভাইয়ের রাজনীতি করি। সারা আপু আমাকে অনেকবার জোর করলেও আমি তার প্রোগ্রামে যাই। আজ সে আমাকে জোর করে নিয়ে গেলে আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে অতিরিক্ত চিন্তার এক পর্যায়ে অনেকগুলো নাপা খাই। পরবর্তীতে বন্ধুরাসহ আপুরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে। আমি কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এই কাজ করিনি।

কিন্তু এ ঘটনার পরপরই ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করেন ঐ শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ছিলাম। যার ফলে আমার শরীরটাও ভালো ছিল না। রাতে প্রোগ্রাম শেষে সারা আপু আমাকে জুস খাওয়ানোর পর আমি আর কিছু না খেয়েই কয়েকটি প্যারাসিটামল খাই। পরে জানতে পারি সেগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ যার ফলে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং বেক পর্যায়ে বন্ধু এবং সিনথিয়া আপু আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যান। এই ঘটনার সাথে সারা আপু কোনো ভাবেই যুক্ত নয়।

এদিকে শয়নের অনুসারী সৈয়দা মেহজাবীন সারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস রিপোর্টারের উপস্থিতিতে ভূমিকা কল দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভূমিকা সেখানে সারার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। এসময় সারা বলেন, সিনথিয়ার সাথে আমার পূর্ব দ্বন্দ্ব ছিল যার ফলে হতে পারে সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ ঘটনা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। রাজনৈতিক কারণেই মূলত আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা রটনার চেষ্টা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, মেডিকেলে উপস্থিত ছিলেন সৈকতের অনুসারী ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবি। তার পূর্ব বক্তব্যের রেকর্ডে তিনি মেহজাবীন সারাকে দোষারোপ করলেও পরবর্তীতে ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তখন ভূমিকা অজ্ঞান ছিল আমার ধারণা থেকে আমি বলেছিলাম হয়তো সারা আপু তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়েছে।  কিন্তু সুস্থ হলে জানতে পারলাম এখানে সারা আপুর কোনো দোষ নেই।

সারার অভিযোগ রবি এবং সিনথিয়া মিলে প্রথমে পরিকল্পনা করে তাকে ফাঁসাতে চেয়েছে পরবর্তীতে তারা ঘটনাটি অস্বীকার করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় আমার এখানে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

ঘটনার কথা স্বীকার করে হলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এবং সৈকতের অনুসারী মালিহা সিনথিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সারা আপু সবার সাথেই একটু রাগারাগি করেন। সেক্রেটারি ব্লকে একজনের কর্মীদের আরেকজন নিয়ে যেতে পারেন, তাই সারা আপুও নিয়ে গিয়েছিল। 

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী নাপা খাওয়ার কারণ যে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া এ ব্যাপারে সে আমাকে কিছু বলেনি। সে অনেকগুলো ওষুধ খেয়েছে জানার পর আমরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে ট্রিটমেন্ট করে রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে সিনথিয়া বলেন উপর থেকে না করে দেওয়ার কারণে এ ব্যাপারে সারা আপু কিছু বলছে না।

জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমানও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে ফোনে কথা বলেন না বলে জানিয়েছেন।