ইউনেস্কো নয়, ড. ইউনূসকে পুরস্কার দিয়েছেন ইসরায়েলি ভাস্কর হেদভা সের

বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শিল্পী মিজ হেদভা সের

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে যে তথ্য প্রচারিত হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এতে বলা হয়, এই সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা নয়। এই পুরস্কার প্রদান করেছেন ইসরায়েলি ভাস্কর শিল্পী মিজ হেদভা সের। বিষয়টি বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনকে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

এর আগে দুপুরে একই তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন বলছে, ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। ১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্বই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোন পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়। ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইজরাইলী ভাস্কয শিল্পী মিজ হেদভা সের।

“মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টার এর আমন্ত্রণে ইজরাইলী ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোন পুরষ্কার/ সম্মাননা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।”

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস পরিচালিত ইউনুস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং ইউনুস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।

এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার ব্যাখা চাওয়া হবে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পীস’ প্রদান: বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের বক্তব্য সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনুস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পীস' পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) এর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ইউনুস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনুসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরো তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ৩০হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবী আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত নন, ততদিন তাঁকে কোন মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয়। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সাথে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে- সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সাথে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।