কম জিপিএ নিয়ে ঢাবির আইনসহ ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ
- ১১ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৫
প্রচলিত ধারণা রয়েছে কম জিপিএ নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সম্ভব নয়। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই ছিটকে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি থেকে বা হারিয়ে ফেলেন মনোবল। তবে কম জিপিএ নিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের মতো বিষয়ে পড়া সম্ভব তারই এক দৃষ্টান্ত ফারজানা দিবা লিসা। কিভাবে কম জিপিএ নিয়েও তিনি ঢাবি ছাড়াও আরও ৬ বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জাবি, জবি, রাবি, ইবি, বিইউপির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন সে গল্পই জানালেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। তার কথাগুলো শুনেছেন জান্নাতুল ফেরেদৌস।
আমার বেড়ে ওঠা সাতক্ষীরায়। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে আমি আমার উচ্চমাধ্যমিক শেষ করি। ২০১৫ সালে আমার এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়। যেখানে আমি জিপিএ ৫ পেতে পারিনি। ফোর্থ সাবজেক্ট ছাড়া মাত্র ৪.১৭ পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিয়ম ছিলো তখন ফোর্থ সাবজেক্ট ছাড়া তারা জিপিএ ধরে থাকে। আমি যখন পরীক্ষা দেই তখন তারা ফোর্থ সাবজেক্ট সহই ধরে যার ফলে আমার ফলাফল ৪.৬৭ থাকে। আমার আশেপাশের অনেকেই বলতেন এত কম রেজাল্ট নিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রায়ই ভেঙ্গে পরতাম। ভাবতাম আমার যে কাঙ্খিত বিষয় সেটা আমি পাবো না।
আমার ইচ্ছা ছিলো আমি যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পরতে পারি। সেসময় আমি বার বার ভেঙ্গে পরলেও প্রচুর পরিশ্রম করতাম। এক মুহূর্তও আমি নষ্ট করিনি। ভাবতাম ফলাফল যাইহোক আমি আমার চেষ্টা করে যাবো। আমার সাথের অনেকেরই এসএসসি এবং এইচএসসি দুটোতেই গোল্ডেন এ প্লাস ছিলো। পরবর্তীতে আমি ভর্তি পরীক্ষা দিলাম আমার সেখানে চান্সও হয় এবং আমি একদম প্রথম সারির বিষয় আইন পাই। এছাড়াও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ২১তম হই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪২তম হই, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ তে ৩য় হই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আমি ৬৫তম হই এছাড়াও বিইউপিতেও আমি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় পাই।
আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম আমার অনেক ফ্রেন্ডের ফেসবুক ছিলো। তখন আমার মনে হত ওরা অনেক সময় নষ্ট করছে। এখন এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় কিন্তু ২০১৪ সালের দিকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার তেমন কমন ছিলো না। আমার মনে হতো আমার তো আইডেন্টিটিই নেই। একটা পরিচয় হোক তারপর আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খুলবো। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরই আমার প্রথম একাউন্ট খুলি। যারা পরীক্ষার্থী আমি তাদের বলবো এ সময়টায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভালো। দেখা যায় ডিকশনারিতে একটা শব্দের অর্থ জানতে গেলেও ১০ মিনিট চলে যায়। এটা একটা হতাশার ও কারণ হতে পারে কারণ সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো ভালো দিক গুলোই শেয়ার করে থাকে। তখন মনে হয় নিজের জীবনেই সব সমস্যা চলছে।
কোচিং- এ পরিচিত অনেকেই ছিলো যারা ২টা গোল্ডেন এ+ পেয়েছিলো কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজনই কোথাও চান্স পায়নি। হয়তো তাদের পরিশ্রম বা প্রিপারেশনের অভাবে হয়নি। যারা এবার ভর্তি পরীক্ষা দিবেন তাদের অনেকেরই হয়তো আশানুরূপ ফলাফল হয়নি। আমি বলবো অনেকেই অনেক কথা বলবে রেজাল্ট যাই হোক না কেন এটা নিয়ে ভেঙ্গে পরলে হবে না। ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টা কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেখানেই ফোকাস করতে হবে। আমার সাথের অনেকেই কম জিপিএ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো বিষয়ে আছে। যার রেজাল্ট যাই হোক না কেন ভেঙ্গে পরা যাবে না। আমি যদি কেন জিপিএ ৫ পেলাম না সেটা নিয়ে পরে থাকতাম তাহলে হয়তো আমার এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সম্ভব ছিলো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ার পর এখন আমি একজন সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে পরিশ্রম এবং প্রপার গাইডলাইনের জন্যই। সময়ের একদম সঠিক ব্যবহার করতে হবে।