কলমেও বসছে ভ্যাট, দিতে হবে বাড়তি দাম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

দেশে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবছরের বাজেটে অগ্রাধিকার-প্রাপ্ত কয়েকটি খাতের মধ্যে অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয় শিক্ষা খাতকে। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সবকিছুর ঊর্ধ্বগতির সাথে বাড়ছে শিক্ষা ব্যয়ও। এমনকি এবারের বাজেটে শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বলপয়েন্ট কলমের ওপরও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দেশের শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার মৌলিক উপকরণের ওপর ভ্যাট আরোপ যুক্তিসংগত নয়। তারা বলেছেন, এতে শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর চাপ পড়বে। বাজেট-সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার পরামর্শ তাদের।

এদিকে বাজেটের বেশ আগে থেকেই শিক্ষা উপকরণের লাগামহীন দামে বেকায়দায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তার ওপর আবারও দাম বাড়লে বেকায়দায় পড়বেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তাদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সংসারের খরচ মেটানোই দায়। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানদের শিক্ষার পেছনে টাকা ব্যয় করতে হয়। আবারও মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াই কষ্টকর হয়ে যাবে। হয়তো খাওয়ার খরচ থেকে কাটছাঁট করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার পরামর্শ তাদের।

অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক টেবিল ওয়্যার, অ্যালুমিনিয়াম কিচেন ওয়্যার, পলিপ্রোপাইলাইন স্ট্যাপল ফাইবার ও টিস্যু পেপার। পলিপ্রোপাইলাইন স্ট্যাপল ফাইবারের বর্তমানে কোনো ভ্যাট আরোপিত নেই। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হবে। এ ছাড়া প্লাস্টিক টেবিল-ওয়ার, অ্যালুমিনিয়াম কিচেন ওয়্যার ও টিস্যু পেপারের ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত আছে। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

তবে চলতি অর্থবছরে মিষ্টি বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপিত থাকলেও আসন্ন অর্থবছরে তা কমে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে করা হবে। এতে কমার সম্ভাবনা রয়েছে বিশাল চাহিদা থাকা পণ্যটির। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণের রূপরেখা তৈরি করেছে এনবিআর। চারটি উপায়ে আগামী ২0২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট খাত থেকে অতিরিক্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করবে সংস্থাটি। আগামী বাজেট ও নিয়মিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। সিগারেটের করহার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য সংস্থাটির। 

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অব্যাহতি তুলে দিয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করতে চায় এনবিআর।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলছেন, বাজেটের আগে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না। তবে বাজেটে এমন কিছু করা হবে না, যাতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়ে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেট প্রণয়নে আইএমএফের কোনো চাপ নেই, তবে প্রতিটি বাজেটেই রাজস্ব বাড়ানোর চাপ থাকে। নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভ্যাট আদায় বাড়াতে হচ্ছে নিজেদের তাগিদ থেকেই।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বলপেন, কাগজ, পেন্সিল, রেজারসহ যেসব শিক্ষা উপকরণের মৌলিক উপাদান, এগুলোর ওপর যাতে কম আবগারি শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্ক দিতে হয় সেদিকে সরকারের লক্ষ রাখা উচিত। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীর জন্য এগুলো ন্যূনতম উপকরণ।

এমনিতেই শিক্ষার বাজেট অনেক কম। তারপরও যদি এগুলোর দাম বাড়ানো হয়, তাহলে করোনা মহামারি, বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি এসব কিছু মিলে ছেলেমেয়েদের পরিবারের ওপর একটা বড় ধরনের চাপ পড়বে। সরকারের যারা বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত, তারা এ বিষয়গুলো ব্যবহারিকভাবে বিবেচনা করবেন এবং সেভাবে তারা সুপারিশ করবেন—যুক্ত করেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, কাগজ, কলম, বই- এসব শিক্ষা উপকরণে ভ্যাট অনেক দেশে অব্যাহতি দেওয়া থাকে আবার অনেক দেশে থাকে না। এটা সরকারের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে। কলম ছাত্ররা ছাড়াও অফিস-আদালতে ব্যবহার হয়। এনবিআরের রাজস্ব দরকার। আর এ খাতে অব্যাহতি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে অব্যাহতি দিলে ছাত্ররা সুবিধা পেত।