এই সামান্য অর্থে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন

এই বছর সরকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬০ কোটি ৫৭ লাখ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা দিয়েছে। এত কম দিতে লজ্জাও লাগে না? সরকারের একেকটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নে দেরির জন্য রিওয়ার্ড দেওয়ার মত প্রতি বছর প্রজেক্টের ব্যয় বাড়াতে কোন কার্পণ্য নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বাড়াতে কার্পণ্যের সীমা-পরিসীমা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কত সামান্য জ্ঞান থাকলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে এত সামান্য টাকা বরাদ্দ দিতে পারে কল্পনা করতে পারেন?

এজন্যই তো সরকার জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর কথা বলে। কিন্তু এইদিকে আর্মি দ্বারা পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসকে দিয়েছে ১২৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সরকার জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক আছে। এরা জানে কোথায় তেল দিতে হবে।

পাশের দেশের পাশের রাজ্যে একটি উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে; যার নাম আইআইটি খড়গপুর। সেই প্রতিষ্ঠানের গত বছর বরাদ্দ ছিল ৮৩০ কোটি টাকা। আর আমাদের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে ১৬৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

অন্যদিকে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ১১৬ কোটি ২৮ লাখ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৮৯ কোটি ৯৪ লাখ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৯৪ কোটি ৭২ লাখ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৯৯ কোটি ২৮ লাখ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৮৩ কোটি ৫২ লাখ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৫৫ কোটি ৩৪ লাখ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৫৮ কোটি ৮৯ লাখ, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ১৬ কোটি ৫৭ লাখ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ২০ কোটি ৮৪ লাখ ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৭কোটি ৫৪ লাখ, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৩৬ লাখ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পিরোজপুর ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ইউজিসির বাজেট: কোন বিশ্ববিদ্যালয় কত টাকা পাচ্ছে

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো জাতির পিতার কন্যা এখন ক্ষমতায়। উনার আমলে উনার বাবার নামে যেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেটিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধুর নামের যেই উচ্চতা সেই উচ্চতার সাথে কি এটা যায়? এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন হওয়ার কথা যার নাম সারা পৃথিবী জানবে। সেটা করতে হলে সেখানে দেশ বিদেশ থেকে সেরা শিক্ষক গবেষক নিয়োগ দিয়ে একটা পাইলট প্রজেক্টর অধীনে তাদের স্পেশাল বেতন স্কেল দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ওই যে। সরকারে এমন কেউ নাই যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্ম বুঝতে পারে, যিনি জাতির পিতার নামে বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হওয়া উচিত তা বুঝতে পারে।

এইসবই আমাদের দুর্ভাগ্য। আরো বড় দুর্ভাগ্য কি জানেন? বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা কিংবা কোন সুপরিচিত বুদ্ধিজীবী শিক্ষক বললো না যে ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এত অল্প বাজেট বরাদ্দ হাস্যকর ও লজ্জাজনক। এই সামান্য অর্থ দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়