বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদক

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বপদকের ৫০ বছর পূর্তি

জাতীয়
বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বপদকের ৫০ বছর পূর্তি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির পঞ্চাশতম বছর আজ। ১৯৭৩ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদক তুলে দেয়া হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মজলুম, মুক্তি ও শান্তিকামী মানুষের জন্য এই দিনটি চিরস্মরণীয়। একাত্তর সালে এই অবিসংবাদিত নেতার নেতৃত্বে  বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এর মাত্র দুবছর পরে বিশ্বশান্তি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পদকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে। 

বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,  বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পদক প্রাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করে।

পরের বছর ২৩ মে, এশীয় শান্তি সম্মেলনের এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেই পদক বঙ্গবন্ধুকে পরিয়ে দেন পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশচন্দ্র। সেই অনুষ্ঠানে রমেশচন্দ্র বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।’ স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রনেতার সেটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পদক লাভ।

মূলত সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা এবং মানবতা ও বিশ্বশান্তি  প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তারা এই পদকে ভূষিত হয়ে আসছিলেন। মানবতাবাদী ও শান্তিবাদী ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডেরিক জুলিও কুরি ১৯৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করলে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৫৯ সালে তাদের শান্তি পদকের নাম রাখে ‘জুলিও কুরি’। সেই থেকে বিশ্বপরিসরে বিশেষত প্রগতিশীল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাকর পদকটি ‘জুলিও কুরি’ নামে পরিচিত হয়ে আসছে।

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর - DesheBideshe

মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে ভারত-সোভিয়েত শান্তি মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি ১৯৭১ এবং বাংলাদেশ-ভারত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা-চুক্তি ১৯৭২, বাংলাদেশের মৈত্রী-সম্পর্কে এই উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি স্থাপনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু।

এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সরকারের জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ এবং শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের নীতির ফলে বাংলাদেশ বিশ্ব সভায় একটি ন্যায়ানুগ দেশের মর্যাদা লাভ করে। সবার প্রতি বন্ধুত্বের ভিত্তিতে বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’

আরও পড়ুন: এভারেস্ট জয়ের ১৩ বছর

সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্ব শান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদক বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গভীর তাৎপর্য বহন করে। বঙ্গবন্ধু এই পদকপ্রাপ্তির আগে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, ভিয়েতনামের সংগ্রামী নেতা হো চি মিন, চিলির গণ-আন্দোলনের নেতা সালভেদর আলেন্দে, ফিলিস্তিনের জনদরদি নেতা ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ এই পদকপ্রাপ্ত হন।