ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা: শেষ সময়ের প্রস্তুতি কেমন হবে?

মো. শেরশাহ আলী খান
মো. শেরশাহ আলী খান

প্রিয় ভর্তিচ্ছু ভাই-বোনেরা, আশা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে (মানবিক ও বিভাগ পরিবর্তন) যারা পরীক্ষা দেবে তারা প্রিপারেশন খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৬ মে তোমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত ‘খ’ ইউনিটের এক্সাম হতে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে তোমাদের হাতে মাত্র অল্প কিছু সময় বাকি আছে। সেজন্য প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে এসে অনেক বেশি হতাশা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, মনে আতংক বিরাজ করছে। আর এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

অনেকের মনে হচ্ছে অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেছে, এই টপিক গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, অমুক টপিক ভালো করে পড়া হয়নি, এ শিট না পড়ে ওই শিট পড়লে ভালো হত। এই বই বাদ রেখে ওই বই পড়া উচিত ছিল। এরকম নানা প্রশ্ন নিজের মধ্যেই জন্মানো স্বাভাবিক। আর এটা তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে সেটা আমাদের সকলেরই জানা। এক্ষেত্রে তোমাদের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিকে আরো শাণিত করার লক্ষ্যে কিছু আমার পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ। 

শেষ মূহুর্তে যা করণীয়
১. প্রথম কাজ হবে অনেকগুলা প্রকাশনির বই টেবিল থেকে যথাযম্ভব সরিয়ে ফেলা। নিজের পছন্দের এবং সব ভালো পড়া হয়েছে এমন যেকোনো একটি প্রকাশনীর বই টেবিলে রাখা।

২.বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠিদের কাছে বিভিন্ন প্রকাশনীর, বিভিন্ন বই দেখে নিজেকে এভাবে মূল্যায়ন করা উচিত নয় যে, হায়! আমার এই বই নেই, আমি এই বই পড়তে পারলাম না। এই ধরনের মন মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।

৩. প্রস্তুতিকে একদম ছোট্ট পরিসরে নিয়ে আসতে হবে। যাতে বার বার রিভিশন দেওয়া সম্ভব হয়।

৪. যতটুকু পড়তে পেরেছি, এখন নতুন করে অন্য কিছু না শিখে আগের পড়াগুলায় বারবার রিভিশন দেওয়া এবং কনফিউশন দূর করা।  

৫. ঢাবিতে বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন অন্য দুইটা বিষয়ের চেয়ে কঠিন হয়। সেজন্য বাংলা ১ম গদ্য, পদ্য, নাটক ও উপন্যাস এর অনুশীলনীর সমস্ত শব্দার্থ ভালোভাবে আয়ত্ব রাখে যেন প্রশ্ন যেকোনো জায়গা থেকে আসলেও পারা যায়। আর গদ্য-পদ্য-নাটক উপন্যাসের পাঠ পরিচিচিত, বিভিন্ন জটিল লাইনের অনুধাবনমূলক ব্যাখা মোটামোটি আয়ত্বে রাখা, বিশেষ করে নাটকের (সিরাজুদ্দৌলা) গুরত্বপূর্ণ চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ উক্তি গুলা কষ্ট হলেও মনে রাখা।

এছাড়া বানান, ধ্বনি ও বর্ণ, সন্ধি, সমাস, উচ্চারণ, পারিভাষিক শব্দ, প্রবাদ প্রবচন ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমারথক শব্দ মনে রাখা।

৬. ইংরেজির ক্ষেত্রে টেক্সট বুকের অনুশীলনীর শব্দার্থগুলার সিনোনিম, এন্টোনিম ও স্পিলিংটা জোড়ালোভাবে মনে রাখা। বইয়ে ইংরেজি কবিতাগুলার শুরু হওয়ার আগে যে ডেস্ক্রিপশন দিয়েছে সেগুলাতেও একটু চোখ বুলানো এবং ইংলিশের ফিগার অফ স্পিসগুলা মনে রাখা। ইংরেজি গ্রামারের ক্ষেত্রে এইচএসসি লেভেলে যে গ্রামারের টপিপগুলা ছিল সেগুলা একটু আয়ত্ব রাখা এবং অনুশীলন করা।

৬. সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সাম্পতিক বিষয়াবলির প্রতি এখন একটু গুরুত্ব দেওয়া। প্রতি বছর এই সাম্প্রতিক থেকে অন্তত ১২-১৫টি প্রশ্ন দিয়ে থাকে। সুতরাং অনেক গুরুত্বের সাথে সাম্প্রতিক বিষয়াবলী নিয়ে পড়াশোনা করা।

৭. যে টপিকগুলা এখন পর্যন্ত পড়া হয়েছে সেগুলাই বারবার রিভিশন দেওয়া। সাধারণ জ্ঞান রিভিশনের উপরই নির্ভর করে। মৌলিক বিষয়াবলির উপর একটু ফোকাস রাখা। যেমন ভূগোল, অর্থনীতি, পোরনীতি ও আইসিটি।

লিখিত
লিখিত নিয়ে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই অনেক বেশি চিন্তিত। লিখিততে ভাল করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন, এক্ষেত্রে সময়েরও প্রয়োজন। কিন্তু এখন সময় সংকীর্ণ, এখন প্রচুর প্রাক্টিস করতে চাইলেও করা সম্ভব হবে না। এজন্য দিনে অন্তত ২ ঘণ্টা করে লিখিত অনুশীলন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ইংরেজি রিটেনের ক্ষেত্রে  প্রচুর প্রাক্টিস করা সম্ভব না হলেও সামান্য লিখলেও সেখানে Subject, Verb ঠিক রেখে, সঠিক বানানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জটিল বা যৌগিক বাক্য ব্যবহার না করে সরল বাক্যে সব লিখে আসতে পারলেই ভালো নাম্বার চলে আসবে।

টেক্সট বুকের অনুশীলনীর ভোকাবিউলারি দিয়ে বাক্য রচনাগুলাও শিখে রাখতে হবে। বাংলা ট্রান্সলেশন, বিভিন্ন টপিক নিয়ে ১০-১২ লাইন ইংরেজি প্যারাগ্রাফ লিখতে পারা অনুশীলন জরুরী। বাংলার ক্ষেত্রে ইংরেজি ট্রান্সলেশন, বানানশুদ্ধিকরণ, প্রয়োগ অপপ্রয়োগ ও  গদ্য-পদ্য-উপন্যাসের বিভিন্ন লাইন/ উক্তির ব্যাখ্যা জানা থাকলে পরীক্ষার খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

পরীক্ষার আগে রাত
পরীক্ষার আগের রাতে যথা সম্ভব বই খাতা থেকে দূরে থাকা। যদি একান্ত প্রয়োজন হয় তাহলে একদম সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট টপিকগুলা দেখা যেতে পারে। সব কাভার করার মন মানসিকতা পরিহার করা। রাত ১০টার আগেই ঘুমানো প্রয়োজন। অন্তত ৭-৮ ঘণ্টার একটা সুন্দর ঘুম মস্তিষ্ককে যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখে। 

পরীক্ষার দিন
পরীক্ষার সকাল সকাল হলে পৌছানো এবং হলে গিয়ে  পুনঃরায়  পড়া শুরু না করা।  কারণ এই সময় পড়তে বসলে মনে হবে সব বাকি রয়ে গেছে এবং আরো বেশি হতাশ কাজ করবে ফলে জানা বিষয়গুলোও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাম্প্রতিকের শীট বা নোট হাতে রাখতে পারো সর্বোচ্চ, টুকটাক দেখার জন্য। আর যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাটা জরুরী। 

পরীক্ষার হল

এমসিকিউ
যেকোনো ভাবেই হোক হতাশ হওয়া যাবে না। নিজেকে সহজ রাখতে হবে এবং অস্থিরতাভাব দূর করে নিজেকে ঠান্ডা রাখতে হবে। পরীক্ষার হলে সব চেয়ে কম সময়ে সহজেই সাধারণ জ্ঞান অংশ দাগানো যায় এবং এত বেশি মাথা ঘাটাতে হয় না। এজন্য আমার পরামর্শ থাকবে শুরুতে জিকে (সাধারণ জ্ঞান) দাগানো এরপর অনেকের ইংরেজিতে ভালো আয়ত্ত্ব থাকে। এক্ষেত্রে ইংলিশ জিকের পর দাগানো যেতে পারে।

সবার শেষে বাংলা দাগানোই ভালো হবে বলে মনে করি। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত ওএমআরে এক অংশের জায়গা অন্য অংশের বৃত্ত ভরাট যেনো না হয়। যেমন ওএমআর শীটের প্রথমে থাকে বাংলা পরে ইংরেজি পরে সাধারণ জ্ঞান অংশ। সেক্ষেত্রে সবার আগে জিকে দাগানোর ক্ষেত্রে বাংলা অংশে কেউ বৃত্ত ভরাট শুরু করে দিল বা ইংরেজি দাগাতে গিয়ে বাংলা অংশে বৃত্ত ভরাট শুরু করে দেয়। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত যেন ভুল না হয়ে যায়। কারণ পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত ভালো ভাগ্য না হলে ওএমআর শীট দ্বিতীয়বার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

লিখিত অংশ
রিটেনের ক্ষেত্রে যাই আসুক না কেন কিছুই বাদ দিয়ে আসা যাবে না। যাই কমন আসুক না কেন সব কিছুই লিখে আসতে হবে। তুমি না পারলেও লিখে আসার চেষ্টা করবে, এতে খালি খাতায় যেমন শূন্য দেওয়া হয়, কিছু লিখতে পারলে শূন্য দেওয়া হবে না। এককথায় একটা লাইনও অলিখিত রেখে আসা যাবে না।
 
এক্ষেত্রে সময় মেইনটেইনটা অনেক জরুরি। দুটো বিষয়ে সময় আগেই স্থির করতে হবে। বাংলায় কিছুটা কম সময় দিয়ে ইংরেজিতে বেশি সময় নিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে লিখতে হবে। প্রশ্ন লিখার আগে প্রথমেই পুরা রিটেন খাতা একবার চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। যাতে বোঝা যায় যে কোন প্রশ্নের জন্য কতটুকু জায়গা পাওয়া যাবে এবং কোন অংশের প্রশ্ন কোথায় লিখতে হবে সেটা বুঝা যাবে। এভাবে সতর্কতার সাথে এক্সাম শেষ করতে পারলেই আশা করা যায় একটি ভাল ফলাফল আসবে। সবার সুন্দর আগামীর মঙ্গল কামনা করছি। সবার জন্য শুভকামনা। 

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়