অভিনন্দন, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত— ক্ষুদেবার্তায় বিরক্ত শিক্ষার্থীরা

ইউনিভার্সিটি
সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির পাঠানো ক্ষুদেবার্তা

“অভিনন্দন জান্নাতুল নায়েমা, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষায় স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আরো জানতে- http://sue.su.edu.bd:5081/sonargaon_erp/su”সদ্য উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মুঠোফোনে এই (09604902600) নাম্বার থেকে এমন ক্ষুদেবার্তা দিয়ে স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃপক্ষ।

তবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এই ক্ষুদেবার্তা পেয়ে সাময়িকভাবে আশ্চর্যন্বিত ও হতভম্ব হওয়ার পাশাপাশি তাদের বিভ্রান্তি ও বিরক্তির কথা জানিয়েছেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে তাদের পার্সোনাল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে সেটিও তারা কেউ বলতে পারছেন না। আর তারা তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য আবেদনও করেননি। তাহলে কিভাবে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, সে প্রশ্নও তাদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা- সমালোচনা

এদিকে, ক্ষুদেবার্তা দেওয়া লিংকে প্রবেশ করলে স্কলারশিপের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্টো ভর্তিচ্ছুদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে একটি তথ্য ছক প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সেটাকে অনলাইন ভর্তির প্রাথমিক তথ্য পূরণ নামে অভিহিত করছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নম্বরগুলো সংগ্রহ করে এই ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসে শিক্ষার্থীরা। তবে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হওয়া বিষয়টি তারা ভর্তির বিজ্ঞাপন হিসেবে মনে করছে। তাছাড়া এইচএসসি-এসএসসি ফলের ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ৫০% থেকে ১০০% স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তথ্যমতে, উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর এখন চলছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির মওসুম। অনেক ভর্তিচ্ছু অপেক্ষা করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। আবার অনেকে বেসরকারিতে ভর্তি হবেন। ভর্তির এই মওসুমকে কাজে লাগিয়ে এই অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, এমন অভিযোগ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের।

আরও পড়ুন: স্টামফোর্ড-আশা-প্রাইমএশিয়াসহ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ, অবৈধ আরও ৩

ফরহাদ তানভীর নামে এক ভর্তিচ্ছুর অভিভাবক জানান, ছোটভাই ও ভাগিনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলাম, সেখানে আমার নাম্বার দেওয়া ছিলো। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার সেই নাম্বারে এমন ক্ষুদেবার্তা আসছে ছোটভাই ও ভাগিনার নাম উল্লেখ করে। আমার কথা হলো, আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গেল কিভাবে?   

এমন ক্ষুদেবার্তার মিমও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলছেন, ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে এমন ক্ষুদেবার্তায় তারা অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কেমন করে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এসব ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে সেটিও তারা কেউ বলতে পারছেন না। এসব ক্ষুদেবার্তা কি আসলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে নাকি অন্য কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

স্কলারশিপের জন্য আবেদন না করলে মুঠোফোনে এমন ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ। তিনি বলেন, যেহেতু স্কলারশিপের জন্য কোন শিক্ষার্থী আবেদন করেনি তবুও তাদেরকে এমন ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল বাশারে সঙ্গে মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম নুরুল হুদা বলেন, এই বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস দেখছেন। তাই এই প্রতিবেদককে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওমর ফারুক মোল্লা বলেন, মূলত সামার সেমিস্টারকে সামনে রেখে এই ধরনের ‘রেডি ক্ষুদেবার্তা’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভর্তিচ্ছুদের পাঠানো হচ্ছে। তবে স্কলারশিপের জন্য কেউ আবেদন করেনি এবং আমরাও কাউকে নির্বাচিত করিনি। 

তিনি আরও বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মওসুম চলছে। সামনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। তাই আমরা সামার সেমিস্টারের ভর্তিতে এইচএসসি-এসএসসি ফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ৫০% থেকে ১০০% স্কলারশিপ দিচ্ছি। হয়তো নির্দ্দিষ্ট সময় পরে এটাও থাকবে না।

তবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নাম্বার কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এ প্রশ্নের সঠিক কোন জবাব দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।