অধ্যাপক ইমতিয়াজের অপসারণ চেয়ে ঢাবিতে মানববন্ধন, ভিসিকে স্মারকলিপি

বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আজ রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংগঠনটির উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। পরে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যারা ৭ই মাচের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের। আমরা এই শিক্ষককে ধিক্কার জানাই। আপনার এই অপতৎপরতা আমরা কখনো মেনে নেব না। এই নিন্দনীয় বক্তব্যের জন্য আমরা অধ্যাপক ইমতিয়াজের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি ঢুকে পড়েছে যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। হাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিতর্কিত করেছেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদ নিয়ে বিতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন বাঙালিরা যে বিহারীদের হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবীদের একটি শ্রেণি আছে যারা মুখোশ পড়ে আছে। যারা স্বাধীনতাকে মেনে নিতে চায় না। যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তাদের চেয়ে মুখোশধারীরা ভয়ংকর। তাদের কর্মকান্ড আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বিকর্কিত করছে। তাদের অপপ্রচারের প্রতি সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশ একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসেও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যারা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন তারা বাঁচতে যায়নি। তাদের লক্ষ্য ছিল তাদের প্রাণের বিনিময়ে এদেশের সাধারণ জনগণ ভালো থাকবে। কেন আজকে মুক্তিযুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে ৩০ হাজার আবার কোথাও বলা হচ্ছে ৪০ হাজার আবা কোথাও ৩ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক থাকতে হবে।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা ‌‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ নামে বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজে হাজির হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় পাকিস্তান’ বলতে শুনেছেন। উক্ত বইয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি। তার উল্লেখিত পুস্তকে এমন কথাও লিখেছেন যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে ১৯৭১-এ বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা ১৯৪৮ সালের ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’র আওতায় পড়ে না। জেনোসাইড কনভেনশনের সংজ্ঞাভুক্ত হতে হলে নাকি একটি মানবগোষ্ঠী কর্তৃক অন্য এক মানবগোষ্ঠীকে আক্রমণ করতে হয়।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা করে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে লিখেছেন, "একটি মৌলিক প্রশ্ন হলো, আসলেই কি ৩০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল, নাকি মৃতের সংখ্যা কম ছিল? তার এমন দুঃসাহসিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ লেখনীর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

তার অপসারণের দাবিতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কর্তৃক মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড কখনোই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি মেনে নেবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার অপরাধে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে অনতিবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করতে হবে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এক বিন্দু ছাড় দেবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আহবান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।