সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে জাবিতে মানববন্ধন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
জাবি সাংবাদিকদের মানববন্ধন

প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর  বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত সাংবাদিকরা।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার পরিষদের জহির ফয়সাল বলেন, শামসুজ্জামানকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে এই সরকার নির্লজ্জতার প্রমাণ দিয়েছে। এই সরকার মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। এই সরকার ৭১ এর স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার এই ৫২ বছরে দেশে কেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না?  অতি স্বত্বর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

সাংস্কৃতিক জোটের সহ সম্পাদক তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা এক প্রকারের গুম। রাষ্ট্রের গুন্ডা বাহিনী তাকে গুম করেছে। এই সরকার স্বৈরাচারী সরকার। শুধু সাংবাদিক না, যারাই এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদেরকেই গুম করা হয়েছে। দেশে যেখানে সংবাদকর্মীর ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা নাই সেখানে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমারা কোনরকম শর্ত ছাড়াই অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করছি। 

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, শামসুজ্জামান সাংবাদিকতার জন্য শহরের চাকচিক্যময় জীবন ছেড়ে গ্রামীন পরিবেশে বেছে নিয়েছেন৷ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শামসের কলম কথা বলেছে। তার বিরুদ্ধে ফারজানা রুপা রিপোর্ট করেছেন। আমি ফারজানা রুপাকে প্রশ্ন করতে চাই, ফুলবিক্রেতা কি একজন দিনমজুর নয়? অবিলম্বে শামসকে মুক্তি দিন, প্রহসন বন্ধ করুন। 

জাবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক বোরহান উদ্দিন বলেন, সরকার শামসের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। সরকার কি দেখেছে কি পরমাণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে? একটা রিপোর্টের জন্য তাকে রাতের আঁধারে তুলে নেয়া হলে সকল সাংবাদিক ভীত হয়ে পড়বে৷ সরকারের দায়িত্ব সন্ত্রাসী করা নয়। জনগনের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জানমালের নিরাপত্তা  দেয়া৷ আমরা এই আইনের বিরুদ্ধ দাঁড়াতে চাই। 

মানববন্ধনে জাবিসাসের সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, 'আপনারা গত দুই দিনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে তামাশা লক্ষ্য করলেন তা নিতান্তই ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহি:প্রকাশ। সেই একই মানসিকতা ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট বানাতে ক্ষমতা কাঠামোকে উৎসাহিত করেছে। যেটি এখন সাংবাদিকতার যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতেই আজ শামস ভাই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মধ্যে।'

মানববন্ধনে তিনটি দাবি পেশ করে জাবিসাস সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, 'অবিলম্বে শামস ভাইকে শর্তহীন মুক্তি দিতে হবে, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিবর্তন মূলক আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট (ডিএসএ) বাতিল করতে হবে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের সভাপতি রাকিব আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়, জাবিসাসের সদস্য মেহেদী মামুন, নাসির উদ্দিন শিকদার প্রমুখ।