‘স্বল্প আয়ের পরিবারে ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণের হার ৪৬ শতাংশ’

মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ-জরিপের ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা
মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ-জরিপের ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা

দেশের স্বল্প আয়ের পরিবারে ১৮ বছরের আগে নারীদের গর্ভধারণের প্রবণতা বেশি এবং এ হার ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ। বুধবার (২২ মার্চ) প্রকাশিত এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই জরিপ প্রকাশ করা হয়। ওয়াই-মুভস প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ইয়েস বাংলাদেশ এবং ইউথ ফর চেঞ্জ।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক, বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (কৈশোর-কালীন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য) ডা. মনজুর হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি সময়কালে যুবকদের মাধ্যমে জরিপটির উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের ৬৪ জেলায় ৩ হাজার ১৭৫টি পরিবার, বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর অংশগ্রহণে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে।

জরিপের তথ্য বলছে, সর্বনিম্ন আয়ের (মাসিক ২৫০০ টাকা) পরিবারে ১৮ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশই জানান তারা ১৮ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করেন। ১৪ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত এবং ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ তা অনুসরণ করেন। আর ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে পুরুষ ও নারী একত্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে তারা তথ্য পান মূলত টেলিভিশন ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ, কমিউনিটি ওয়ার্কারের মাধ্যমে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন সংস্থা ইয়েস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জরিপে ১৮ শতাংশ নারীই জানিয়েছেন তারা বিগত ১২ মাসে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২১ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর মাসিক পারিবারিক আয় ২৫০০ টাকার কম এবং ৯ দশমিক ৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার বেশি। ১৪ দশমিক ৭ শতাংশের দাবি তারা পড়াশোনা এবং চাকরির ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন।

জরিপ করা ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে শিশুরা কোনও না কোনোভাবে বাসায় কিংবা ঘরের বাইরে শারীরিক বা মানসিক শাস্তি বা আগ্রাসনের শিকার বলেও জানানো হয়েছে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে। জপির প্রতিবেদনে একাগ্র প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের আরও জোরালো ভূমিকা পালন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং ব্যবস্থা, বাজেট বৃদ্ধি, তথ্যের ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে সমস্যার সমাধানে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস, উপপরিচালক (ইনোভেশন) মো. আরিফুল হক মামুন, গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়; মো. মুস্তাসিম বিল্লাহ, উপপ্রধান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ; ড. মুনিরা বেগম, জয়েন্ট চিফ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, ফেরদৌসি বেগম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর এসআরএইচআর লিড, এবং এসডিজি প্ল্যাটফর্ম-এর বিভিন্ন সদস্য প্রতিনিধিরা।