মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসের প্রতারণা

হোটেল-ফ্ল্যাটের মালিক এসএসসি পাস যুবক

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা পরীক্ষার আগে সরবরাহ করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এস এম আনিস নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। গ্রেফতার আনিস এসএসসি পাস। তার কর্মজীবন শুরু হয় পাটকলে। এরপর গার্মেন্টসে কাজ নেন তিনি।

রাজধানীর মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে এরই মধ্যে দুইটি হোটেল এবং মনিপুরীপাড়ায় একটা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন আনিস।

ডিবি বলছে, প্রশ্নফাঁস করার সক্ষমতা ছিল না আনিসের। মূলত প্রশ্নফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। আনিস একজন প্রতারক ও দালাল।

আজ শুক্রবার (১০ মার্চ) মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন আর রশীদ।

আরও পড়ুন: মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসের নামে প্রতারণা, যুবক আটক

তিনি বলেন, গ্রেফতার আনিসের কাছ থেকে চলতি বছরের পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, আগের বছরে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল পদপ্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল এবং সনাতন স্ট্যাম্প- সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতার আনিস এসএসসি পাস করে কিছুদিন পিপলস জুট মিলে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কাপড়ের কারখানায় ডাইংয়ের কাজ করেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি ফার্মগেট এবং গ্রিন রোডে ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফরম কেনাবেচা শুরু করে। এখান থেকেই পরিচিত হয় নিজ এডুকেশন নামক কনসালটেন্সি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাহিদের সঙ্গে। তারপর থেকে আনিসও নিজস্ব কনসালটেন্সি ফার্ম ফ্রেন্ডস অ্যাডমিশন কনসালটেন্ট খুলে বসেন।

আর এজন্য তিনি সিটি করপোরেশন থেকে মুদি দোকান চালানোর মতো ৭ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ব্যবসার লাইসেন্সও নেন। সেই লাইসেন্সেই তিনি দেশের এবং সার্কভুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেডিকেল কলেজে ভর্তির বাণিজ্য শুরু করেন।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এই কাজের জন্য নিজের প্যাডে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের সিট সংরক্ষণের জন্য চিঠি লিখতেন। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের লোকদের এবং মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু ও রিটায়ার্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের নামে ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতারণা করে আসছিলেন।

তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি অথবা প্রতারণা বাণিজ্য করে এস এম আনিস এরই মধ্যে দুইটি হোটেল এবং মনিপুরীপাড়ায় একটা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সক্ষমতা তার ছিল না। কিন্তু এই পরীক্ষার নামে বিস্তর প্রতারণার জাল বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তার করেন তিনি।

এস এম আনিসের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা হয়েছে। তার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত ছিলেন, সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।