শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে সরকার: শিক্ষা উপমন্ত্রী

‘বিশ্ববাজারে একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
‘বিশ্ববাজারে একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও বৈশ্বিকবাজারে অবস্থান করতে দেশের শিক্ষার্থীদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশ্বায়নের চাহিদার আলোকে নিজেদেরকে আরও দক্ষ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাষা, কারিগরি শিক্ষা ও নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করা খুবই জরুরি।

বুধবার (১ মার্চ) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে এক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিশ্ববাজারে একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা’ শীর্ষক আলোচনাটির আয়োজন করে আয়াত এডুকেশন ও কানাডার সেনেকা কলেজ। এদিন আলোচনার পূর্বে আয়াত এডুকেশন ও সেনেকা কলেজের মধ্যে কানাডায় পেশাগত দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা প্রদানে দ্বিপাক্ষিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

দেশকে এগিয়ে নিতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও বিশ্ব বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের জনবলকে দক্ষ করে গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। বিশ্বায়নের চাহিদার আলোকে জনবলকে আরও দক্ষ করতে হবে। বিশ্বজুড়ে অটোমেশনের মতো কারিগরি-ভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতার চাহিদা বাড়ছে। দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা ও সরবরাহের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে, যা পূরণ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।

নওফেল বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক তা মোকাবেলায় আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পাঠ্যবই নিয়ে চ্যালেঞ্জ, শিক্ষকরা এখনো তাদের ধারনা পরিবর্তন করতে চান না-সে চ্যালেঞ্জ, কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে সামাজিক অবস্থানসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করতে হচ্ছে। আমরা আশা করছি, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো; সরকার সেজন্য কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা-বৃদ্ধি করা জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে দেশের বাইরে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান থেকে নিজেদের এগিয়ে রাখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আরবি ভাষা জানি, তা অনেক ভালো পড়তে পারি; কিন্তু তার অর্থ বুঝতে না পারার কারণে এসব দেশে আমাদের প্রবাসীদের কোনো ভালো অবস্থান হচ্ছে না। সেজন্য আমাদের তরুণদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে; তা যে দেশের বা অঞ্চলেরই হোক না কেন।

আলোচনায় সেনেকা কলেজের প্রেসিডেন্ট ডেভিড এগ্নিও বলেন, বাংলাদেশের সব সেক্টরের মানুষদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানে আমাদের আকাঙ্ক্ষা আছে। এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষদের কাছে পৌঁছাতে পারব।

ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনের কাউন্সিলর এঞ্জেলা ডার্ক বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার যেটা আয়াত এডুকেশনের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা করতে যাচ্ছি। এ জন্য আমরা একটা কারিকুলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেটা কোর্স প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশের শিক্ষায় কারিকুলামগত গ্যাপ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে আয়াত এডুকেশনের চেয়ারম্যান তাহসিন আমান বলেন, নার্সিং পেশার অনেক নেতিবাচক কথা আছে, যার ওপর আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। আমরা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানে বাইরে পাঠানোর কাজ করছি, যা নার্সিং পেশার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। 

নুসরাত আমান শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে বেসিক ডিগ্রির পাশাপাশি বাইরের দক্ষতা, জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ অর্জনের গুরুত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আরও বাড়ানো দরকার। আয়াত এডুকেশন সে লক্ষ্য কাজ করছে এমনকি প্রান্তিক এলাকাতেও এটা নিয়ে কাজ করতে চাই আমরা।

অনুষ্ঠানে আয়াত এডুকেশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুসরাত আমান ও সেনেকার পক্ষে কলেজটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড এগ্নিও। অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনের কাউন্সিলর ও সিনিয়র ট্রেড কমিশনার এঞ্জেলা ডার্ক, আয়াত এডুকেশনের চেয়ারম্যান তাহসিন আমান, সিওও ইমরান চৌধুরী, আয়াত কলেজ অব নার্সিং অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস’র অধ্যক্ষ হালিমা আক্তার, আয়াত এডুকেশন ও সেনেকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।  

প্রসঙ্গত, দেশের যুব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ করছে আয়াত এডুকেশন। প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, জব প্লেসমেন্ট সার্ভিস ও পলিসি এডভোকেসি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ৩৬০০ এরও বেশি শিক্ষার্থীকে নার্সিং, কেয়ারগিভার ও ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রদানের পর তাদের মধ্য থেকে ২২০০ জনেরও বেশি যুবককে দেশের বিভিন্ন লিডিং প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করেছে তারা।

আয়াত এডুকেশন মূলত আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেলথ সায়েন্সেস, আয়াত কেয়ার, আয়াত স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও ডিগনিফাইং লাইফ (প্যালিয়েটিভ কেয়ার) প্রোগ্রাম এই চারটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান।