ছাত্রলীগের কর্মসূচির নাম অ্যাকশন ক্যাম্পেইন হওয়া উচিত: আখতার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসায় যৌন হয়রানি ও র‌্যাগিং বিরোধী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এরই অংশ হিসেবে আজ রবিবার দুপুরে ঢাবিতে অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন ‘অ্যাগেইনস্ট র‌্যাগিং এন্ড সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ইন ক্যাম্পাস’ শীর্ষক এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। 

এদিকে, সারাদেশে শিক্ষাঙ্গনে হামলা-নির্যাতন, সন্ত্রাস, সহিংসতায় জড়িতদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। কর্মসূচিতে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় ছাত্রলীগের নামই জড়িত। তারা ক্যাম্পাসে 'অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট র‍্যাগিং এন্ড সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ইন ক্যাম্পাস' এর আয়োজন করেছে। অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন নামের পরিবর্তে নাম হওয়া উচিত ছিলো অ্যাকশন ক্যাম্পেইন।

“বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সচেতন অভাব শুধু অ্যাকশনের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি অ্যাকশন প্রয়োজন। আমাদের নেতারা অসুস্থ হয়ে পরে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”

তিনি ছাত্রলীগকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আপনারা যেখানে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে চাচ্ছেন সেখানে আপনাদের দলেই এসব ঘটনা বাড়ছে।আপনাদের যদি সৎ সাহস থাকে আপনাদের দলের যারা র‍্যাগিং, নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ও প্রশাসনিক শাস্তির ব্যবস্থা নিন। যেহেতু আপনারা এসব অন্যায়কে ফৌজদারি অপরাধ বলেছেন সেহেতু অপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। যারা আপিনাদের আজকের প্রোগ্রামে ওন কারণে উপস্থিত হতে পারেনি, তাদেরকে ভাইটাল প্রোগ্রামে অনুপস্থিত থাকার কারণে  রাতে অত্যাচার করবেন এটাই আপনাদের চরিত্র। 

সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমাদের স্বাধীন সত্তা আছে। যারা তোমাদেরকে দাস বানিয়ে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনের সময় হয়ে গেছে। অন্তত কিছু করতে না পারলে মনের ঘৃণার উদ্রেক ঘটাও এটাই তাদের শাস্তি।

অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন, ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি তৌফিক-উজ-জামান পীরচা প্রমুখ।

কর্মসূচিতে অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন আর শিক্ষার পরিবেশ নাই।  ছাত্রলীগ চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম মেডিকেল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটা প্রশাসনের অবহেলা নয় তো সচেতনভাবে পক্ষপাতিত্ব।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল শিক্ষার মান অবনতির কারণ হল, রিডিংরুম, লাইব্রেরি ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের সিট সংকট। খাবারের মান নেই, শিক্ষার্থীরা পুষ্টি সম্পন্ন খাবার পায় না। ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামে আনার জন্য গণরুম, গেস্টরুম ব্যবস্থা চালু করে আবাসন সংকট তৈরি করেছে। তারা ক্যান্টিন থেকে চাঁদা আদায় করে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে তৌফিক-উজ-জামান পীরচা বলেন, আজকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেই অপকর্ম ঘটিয়েছেন, ছাত্রনেতাদের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছেন সেটার জন্য বিবেকের তাড়নায় ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতি সংহতি জানাতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। ছাত্রলীগের অপকর্ম স্বাধীনতার পরে মু্হসীন হলের সেভেন মার্ডার থেকে শুরু। এছাড়া ১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনেও তারা ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছিলো। আজ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা নিন্দনীয় কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে র‍্যাগিং-এর নামে বিবস্ত্র করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে আবরার ফাহাদকে হত্যার কায়দায় ৪ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে আজ এমন কিছু হতো না। তাই সকল ছাত্র সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।