ক্ষমা করে দিও হে ফুলপরী

মোহাম্মদ আলী শেখ

শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন আর বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এদেশ। মা হারিয়েছে সন্তান, সন্তান হারিয়েছে বাবা, স্বামী কে হারিয়েছে স্ত্রী,ভাইকে হারিয়েছে বোন, বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে ভৌগলিক স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতা আমরা চেয়েছিলাম সত্যিকারে আমরা কি তা পেয়েছি? ঠিক একইভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ছিল ধর্ম ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সমন্বয়ে শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের মানব সম্পদে পরিণত করা। কোথায় আমাদের ধর্ম, নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ,পারিবারিক শিক্ষা?

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান আব্দূল মালেক উকিল প্রশ্ন করেছিলেন এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন এমন অজো পাড়াগাঁয়ে,শান্তি ডাংগার দুলাল পুরে স্থাপন করা হবে। তাঁকে উত্তর দেয়া হয়েছিল " সভ্যতায় অনেক উন্নত স্থান থাকতেও আল্লাহ পাক কেন তাঁর নবীকে মক্কার অজোপাড়াগায়  প্রেরণ করেছিলেন। (আবদুল মালেক উকিল সেই যুক্তি খন্ডন করতে পারেননি।) যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছেনি, সেখানে আলো ছড়ানো আমাদের কাজ।"দুলাল পুরের" দুলালেরা" শান্তিডাংগায়" শান্তির সাথে বসে  যাতে লেখাপড়া করতে পারে এ জন্য ই বিশ্ববিদ্যালয় টি শান্তিডাংগার দুলাল পুরে স্থাপন করা হয়েছে।"

আজ আমরা দেখলাম সেখানে দেখলাম আমার বোন ফুলপরীর  করুন অবস্থা। তার উপর পাশবিক নির্যাতন, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, হত্যার হুমকি, গলায় ফাঁস,নিম্ন অংগে বোতল ঢোকানের হুমকি,যা জাহিলিয়্যাতের 

বর্বরতা কেও হার মানায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার দেশের মা বোনের মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছিল, আজ স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্রীলীগ নামধারী দুর্বৃত্তরা আমার বোন ফুলপরীর ইজ্জত নষ্ট করল। একজন সিনিয়র আপু যেখানে ছোট বোনের ইজ্জতের পাহাড়াদার হওয়ার  কথা সেখানে সে নিজেই এক নবাগতার  ইজ্জত নষ্ট করল। ফুলপরী পায়ে ধরে মাফ চেয়েছিল, রক্ষা হয়নি। আরো ভয়ংকর হয়ে বলেছিল "আমরা কত খারাপ জানিস? .... আমরা ছেলেদের চেয়ে খারাপ। ছাত্রলীগের ভাইদের দিয়ে তোর ...... ।"
 
ফুলপরীর ভার্সিটির বয়স মাত্র ৪/৫ দিন। সদ্যজাত নি:স্পাপ শিশু, কোমল তার মন। আকাশচুম্বী স্বপ্ন। অতিদরিদ্র পরিবারের মেয়ে।দু মূঠো ভাত ও সে ঠিক মত খেতে পারেনি। কথা বার্তায় বিনয়ী, পোষাকে শালীন। তদন্ত প্রসঙ্গে অভিযুক্ত যেখানে বলেছিল" নো কমেন্ট" ফুলপরী সেখানে বলেছিল" আমি যা বলার তদন্ত কমিটি কে বলে দিয়েছি।"

ক্যাম্পাসের মায়াবী চেহারা, চিরসবুজের বৃক্ষলতা, নয়নাভিরাম অট্রলিকা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল পেয়ে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছিল। নির্যাতিতা হতভাগা ফুলপরী কে যতবার ফেসবুক, ইউটিউবে দেখেছি ততবারই আমার পাষাণ হৃদয়  বিগলিত হয়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়েছে। স্যালুট করি ফুলপরীর বাবাকে, যিনি একজন দরিদ্র ভ্যান চালক হয়েও দেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পেরেছেন।

এমন বাবার সংখ্যা গণনা করলে কয়জন পাওয়া যাবে আমার জানা নেই। বড় ছেলে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছে। ঐ বিভাগের অধ্যাপক ড: আবদুল হামিদ স্যার আমার সময়ে ইবির ভিসি হয়েছিলেন। মেজ মেয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সেজ মেয়ে ফূলপরী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত ছাত্রী। ছোট ছেলে ২০২৪ সালে বিজ্ঞান থেকে  মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে।

ফুলপরী এ ঘটনার কোন ন্যায় বিচার পাবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ অতীতেও এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে, যার বিচার হয়নি। তদন্তের রিপোর্ট কোন দিন আলোর মুখ দেখবে না।হয়ত প্রতিবেদন দিলেও অপরাধীদের বাঁচিয়ে নিবে। অন্য আরেকটি ঘটনা ঘটবে,তখন ফুলপরীর ঘটনা চাপা পড়ে যাবে। তাছাড়া ফুলপরীর তো শিকড়ে জোর নেই।

তাই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফুলপরী তুমি ন্যায় বিচার পাবে না আমরা ষোল কোটি মানুষ দায়ী থাকবো। ক্ষমা করে দিও হে ফুলপরী।

লেখক: কলামিস্ট ও সহকারী অধ্যাপক, কাদিরদী কলেজ, বোয়ালমারী, ফরিদপুর এবং সাবেক ছাত্র, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়