বৃটেনে আপিলে হারলেন আইএস নেতার বাঙালি বধূ

শামীমা বেগম

ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়ায় চলে যাওয়া তৎকালীন স্কুলছাত্রী শামীমা বেগম তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলে হেরে গেছেন। গত নভেম্বরে পাঁচ দিনব্যাপী এ আপিলের শুনানি হয়। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের বিশেষ অভিবাসন আপিল কমিশন (সিয়াক) শামীমার দাবি নাকচ করে দিয়ে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। কমিশন জানায়, শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল আইনগতভাবে সঠিক ছিল।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও দুই স্কুলবন্ধুর সঙ্গে পূর্ব লন্ডনের বাড়ি ছেড়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট দখলকৃত এলাকায় পাড়ি জমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত পরিবারে জন্ম নেওয়া শামীমা বেগম। ২০১৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন শামীমা বেগম। 

বর্তমানে ২৩ বছর বয়সি শামীমা উত্তরপূর্ব সিরিয়ার আল-রোজ শরণার্থী শিবিরে আছেন। ওই শিবিরকে তিনি ‘কারাগারের চেয়েও জঘন্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ সেখানে বন্দিদশার কোনো সীমাপরিসিমা নেই। আপিল কমিশনের এই রায়ের ফলে শামীমার যুক্তরাজ্যে ফেরা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্ট মাসে বিবিসি নিউজের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, শামীমাকে সিরিয়ায় পাচার করা হয়েছিল। একটি গোয়েন্দা সংস্থা সে সময় কানাডার হয়ে কাজ করছিল। ওই সংস্থাই শামীমাকে পাচারের জন্য দায়ী। কানাডীয় সরকার তখন বলেছে, তারা এই অভিযোগের তদন্ত চালাবে।

সিরিয়ায় শামীমার সঙ্গে নেদারল্যান্ডের নিযুক্ত আইএসের এক সদস্যের সঙ্গে বিয়ে হয়। আইএসের অধীনে তাঁরা তিন বছরের বেশি সময় বসবাস করেন। ২০১৯ সালে ব্রিটিশ টাইমস পত্রিকার এক খবরে জানা যায়, শামীমা ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি সিরিয়ার একটি শরণার্থীশিবিরে আছেন। পরে শামীমার সন্তান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শামীমা বলেন, এর আগেও তিনি দুই সন্তানকে হারিয়েছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিবিসির আই অ্যাম নট আ মনস্টার পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমা বলেন, আইএস দলে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত। জীবনে যে কয় দিন বাঁচবেন, এই অনুতাপ তাঁর থাকবে। বাকি জীবন যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করবেন তিনি।

শামীমা ওই পডকাস্টে আরও বলেন, ম্যানচেস্টার অ্যারেনা এলাকায় ২০১৭ সালে বোমা হামলায় ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে আইএস জড়িত ছিল। এটি ছিল আইএসের ঘাঁটিতে সামরিক হামলার প্রতিশোধ।

বিবিসির ওই পডকাস্টে একান্ত সাক্ষাৎকারে শামীমা বলেন, যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে তিনি পাচারের শিকার হয়েছিলেন। আইএস এ বিষয়ে তাঁকে বিস্তারিত যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল, তা–ও তিনি বলেন। শামীমা আরও বলেন, আইএসের মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির সহায়তা ছাড়া তিনি কখনোই সিরিয়ায় যেতে পারতেন না। আইএসের মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ওই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আল রাশেদ বলে জানান শামীমা।