রাবিতে ভাষা আন্দোলন: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

রাবিতে ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সেমিনার
রাবিতে ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সেমিনার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) লেখক ফোরামের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনস্ কমপ্লেক্সের কনফারেন্স রুমে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কোরবান আলী, আলোচক ছিলেন সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন, কথাশিল্পী নাজিব ওয়াদুদ। এছাড়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাবি লেখক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. আজহারুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: রাবি শিক্ষকদের লেখা ৫টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

এতে রাবি লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সেতাউর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে অধিকাংশ সময়ে এমনভাবে তুলে ধরা হয় যেনো বায়ান্নো সালের ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করে এর উন্মেষ হয়েছিল। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তা চূড়ান্ত বিষ্ফোরিত হয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হয়। অথচ বাস্তব তথ্য হলো বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এ কাজটি শুরু হয়েছিল মধ্যযুগের কবি সাহিত্যেকদের কাব্য সাধনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে বিশ শতকের সূচনাপূর্বে ইংরেজ শাসন অবসান আন্দোলন শুরু হলে বাংলায় শিক্ষা ও অফিস আদালতের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি ওঠে। এই দাবির চূড়ান্ত পর্বটি শুরু হয় তমুদ্দুন মজলিস নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের মধ্যে দিয়ে।
 
বক্তারা আরও বলেন, এভাবেই নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি তরুণদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাকে আমরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পায়। আজ বাংলা ভাষার বেহাল দশা। আঞ্চলিকতার নামে রেডিও টেলিভিশনের উপস্থাপক কলাকুশলীদের আলাপচারিতায় জগা খিচুড়ি মার্কা বাংলা শব্দ ব্যবহার করে নবীন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। বিশ্বায়নের নামে বাংলা ইংরেজি মিশ্রিত অদ্ভুদ বাংলা চর্চার মহড়া চলছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও কৃষি প্রযুক্তির বই পুস্তকে বাংলা করণে অনীহা দেখা যাচ্ছে। অথচ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো মাতৃভাষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ লাভ করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে।

বক্তারা বলেন, আমাদের দেশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, সড়কের নামে বাংলা বানানে ভুলের ছড়াছড়ি চলছে। এসব দুর হওয়ার কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে। যে প্রত্যাশা নিয়ে ভাষা আন্দোলনের সূচনা, বিকাশ ও সাফল্য এসেছিল তা পর্যালোচনা করে বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষার স্থান ও মর্যাদাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানান তারা।

এসময় সেমিনারটিতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও লেখক ফোরামের নেতৃবৃন্দরা।