ইবি ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ছাত্রলীগের নির্যাতন: অভিযোগ শুনবেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারন করার ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন আজ বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা।

আলোচিত ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়। বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন।

 এ নিয়ে গতকাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ডেকে নিয়ে নবীন এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। রাতভর নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ওই ছাত্রীর ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও পরিসংসখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এসময় তার সঙ্গে আরও ৫-৬ জন ছাত্রী জড়িত ছিলেন। তাদের সবার নাম-পরিচয় জানা না গেলেও তাবাসসুম নামে একজনের পরিচয় মিলেছে। তিনি ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। আর ভুক্তভোগী ফুলপরি খাতুন একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারী ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তাবাসসুম সকলের কাছে জানতে চান দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে কারা থাকেন। আমি হাত উঠালে আপু আমাকে বলেন, হলে উঠেছো আমাকে আগে জানাওনি কেনো। এ সময় আপু আমাকে রাত ৮টায় প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই যেতে পারি নাই। তা ছাড়া আমি সবকিছু তেমন চিনতামও না।

‘‘দু’দিন পরে আমি ওই রুমে গিয়ে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের কেউ আছে কিনা জানতে চাই। ওইসময় আপু ঘুমিয়ে থাকায় আমি চলে আসি। পরের দিন ক্লাসে আসলে আপু আমাকে খুবই ঝাড়ি দেয়, বলেন তুমি বড়দের সম্মান করতে জানো না, আমাদেরকে আপু বলো না, তুমি উপরে থাকো বলে নিচে সাপের পাঁচ পাও দেখেছো এরকম কথা বলে ধমক দেয়’’।

ভুক্তাভোগী উল্লেখ করেছেন, আমি বলি আপু আপনারা এরকম করলে আমি হল প্রধানকে বলবো। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অন্তরা আপুর কাছে নিয়ে যায়। ওইদিন রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আমি অন্তরা আপুর রুমে ছিলাম। এসময় আপুর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি। পরে আপুরা আমাকে হল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি র করে দেয়।

‘‘পরে হলের স্যাররা আমাকে অন্তরা আপুর দায়িত্বে দিয়ে আসেন। এসময় আপু আমাকে ৩০৬ নম্বর রুমে যেতে বলেন। আমি ৩০৬ নম্বর রুমে চলে যাই। পরে রাত ১১টার সময় অন্তরা আপু আমার রুমে গিয়ে আমাকে গণরুমে যেতে বলেন। গণরুমে গেলে আপু আমাকে মারধর করেন, পায়ে পিন ফুটান। অনেক বাজে বাজে ভাষায় কথা বলেন।’’

ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী লিখেন, এক পর্যায়ে আপু আমাকে জোর করে আমার জামা খুলিয়েছেন। পরে বিবস্ত্র অবস্থায় আমার ভিডিও ধারণ করেন। প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে লিখে আমাকে তা মুখে বলিয়ে নিয়ে রেকর্ড করেছেন। রাতভর তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করেছেন। পরের দিন সকালে কোনোভাবে হল থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসি।

ফুলপরি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, এসময় তারা বলেছে, মুখে মারিস না, গায়ে মার। যাতে কাউকে দেখাতে না পারে। আমাকে তারা খুবই ভয় দেখিয়েছে এবং এসব কথা বাইরে বললে আমাকে একেবারেই মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, তোকে হল থেকে উলঙ্গ করে বের করে দেবো। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে তারা আমাকে শুধু মেরেছে। অন্তরাসহ ৫-৬ জন মিলে আমার সঙ্গে এসব করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান অভিযুক্ত সানজিদা অন্তরা এসব ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি এমন ধরনের কোনো কিছু করলে তা প্রমাণ করুক। এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকি আরাফাত বলেন, এ ঘটনা যদি সত্য হয় এবং তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে তার শাস্তির দাবি জানাবো। এছাড়া এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির সাথে বসে বিষয়টি আমরা সমাধান করেছিলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরিন বলেন, সিনিয়র-জুনিয়রের র‌্যাগিংয়ের একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই র‌্যাগিং অ্যালাউ না। আমি নীতিগতভাবেও এটা কখনো সমর্থন করি না। বিষয়টা কীভাবে কি ঘটলো আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।