৪ দশক আগের ১৪ই ফেব্রুয়ারি কেন রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা?
- ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৪:২৬
১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বিশ্বে ভ্যালেন্টাইন'স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসাবেই বেশি পরিচিত। বাংলাদেশেও বেশ কিছুদিন ধরে ভালোবাসার দিবস হিসাবে দিনটি পালন করা হচ্ছে। আর ২০২০ সাল থেকে ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে দিনটি পহেলা ফাল্গুনও হিসেবে পালিত হচ্ছে। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন পালিত হতো। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে ওই বছর থেকে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভ্যালেন্টাইন'স ডে বা ভালোবাসা দিবস একইদিনে পড়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই এই দিনটিকে পালন করেন স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই দিবসটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে বর্ণনা করছেন।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশে তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড.মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। সে বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত একটি কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ওই সমাবেশ ডাকে। কিন্তু সেখানে পুলিশ গুলি করলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাব শরীফ কমিশনের ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষার অধিকার আদায়ের জন্য ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিল মোস্তফা ওয়াজিল্লাহ, বাবুল প্রমুখ ছাত্র নেতারা। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতি অনুসরণ করে হাঁটতে চেয়েছে স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের মজিদ কমিশনের শিক্ষানীতি। প্রশ্ন আসে, যে পাকিস্তানের শিক্ষানীতি রক্ত দিয়ে বাতিল করছে ছাত্ররা, সেই শিক্ষানীতি কি বাংলাদেশে চালু করা উচিত? তৎকালীন সামরিক শাসকের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব করেন। সেখানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। ফলে সেই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ১৭ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো। তারপর শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন, কালক্রমে যেটি গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। ছাত্রসমাজের দাবি ছিল একটি অবৈতনিক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি। কিন্তু ড. মজিদ খান যে নীতি ঘোষণা করেন, সেখানে বাণিজ্যিকীকরণ আর ধর্মীয় প্রতিফলন ঘটেছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। তাই শুরু থেকেই ওই নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
১৪ ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান, অবশেষে নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে লুটিয়ে পড়েন শহীদ দিপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ূব, কাঞ্চনসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে বাধ্য হয়েছিল বাতিল করতে কুখ্যাত মজিদ কমিশনের শিক্ষানীতি। সে কারণেই ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
স্বৈরাচার ছাত্র প্রতিরোধ দিবসে আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিক্ষা ভবন চত্বর সংলগ্ন শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটি নেতাকর্মীরা। এছাড়া বাম প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনও শ্রদ্ধা নিবেদন করে। রাজধানী ঢাকার বাইরেও কয়েকটি বাম প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন দিবসটি পালনে নানান কর্মসূচি পালন করে।