চা বিক্রি করছেন রেলওয়ের দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করা রনি

চা বিক্রি করছেন রেলওয়ের দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করা রনি
চা বিক্রি করছেন রেলওয়ের দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করা রনি

বাংলাদেশ রেলওয়ের নানা দুর্নীতির  বিষয়ে আন্দোলন করে সবার নজরে আসেন মহিউদ্দিন রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক এই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আত্মশুদ্ধির আন্দোলন, ক্ষুধামন্দা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সৎ উপায়ে উপার্জনের লক্ষ্যে ব্যবসাটা শুরু করেছি। 

নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) করা এক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আমার ১০০০ কাপ চা বিক্রি হলো। এক্সপেরিমেন্টাল পিরিয়ড ছিল তাই সেভাবে কাউকে জানানো হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চায়ের ফ্লাস্কের সাথে প্ল্যাকার্ড নিয়ে চা বিক্রি করছেন তিনি। প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, এখানে চা-মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রনি লিখেছেন, বিগত ১ মাস যাবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছেন তিনি। আর চায়ের ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসা বেজায় ভালো চলছে।

তিনি আরও লিখেছেন, অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাদের জ্ঞাতার্থে, এটা কোনো সাময়িক সময়ের ক্যাম্পেইন বা নিছক মজার উদ্দেশ্যে নয়। তার কাছে ১০ টা মূল্যে রঙ চা পাওয়া যায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের যাত্রী ছাউনির বিপরীত পাশে ডাচের কর্নারে বিকেল ৩টা থেকে রাত পর্যন্ত চা বিক্রি করেন।

রনির এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। আর নেটিজেনরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী, স্টাফ, টিচার অনেকেই নিজেকে লুকিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিন্তু রনি সেই লুকোচুরির ভীত ভেঙে দুটি ফ্লাস্ক আর কিছু কাপ নিয়ে হাসিমুখে চা বিক্রি শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনের মাধ্যমে সবার নজরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তিনি বিগত বছরের জুলাইয়ে এ আন্দোলন করে আলোচনায় আসেন। এ নিয়ে তখন রেলওয়ের সঙ্গে তার বৈঠকও হয় এবং তাদের আশ্বাসে রনি তখন আন্দোলন স্থগিত করেন।

রনি বিগত বছরের ৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা-যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদসহ ছয় দফা দাবিতে হাতে শেকল বাঁধা অবস্থায় কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করেন। শুরুতে একা আন্দোলন করলেও পরে তার বন্ধু, সহপাঠীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও তার সঙ্গে কমলাপুর রেল স্টেশনে অবস্থান নেন। ক'দিন ধরে সেখানে তারা গান, কবিতা, পথনাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

তখন রনির ৬টি দাবির মধ্যে ছিল টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে; অনলাইন-অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে; ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।