রক্তদানে গিয়ে প্রাণ গেল এইচএসসি পরীক্ষার্থী লতিফুরের

চলতি বছরের এইচএসইসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ করেছেন দুই বন্ধু। এখনও ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি। জীবন সংকটে থাকা অন্য রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু পথিমধ্যে ট্রলি চাপায় গুরুতর আহত হলে তাদেরকেই রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে রংপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে তিনি প্রাণ হারান। আহত অপরজন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরের তালতলা মোড় এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। 

নিহত পরীক্ষার্থীর নাম লাতিফুর রহমান (১৮)। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে বলে জানা গেছে। লাতিফুর এ বছর কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। আহত শিক্ষার্থীর নাম আহসান হাবিব আকাশ (১৮)। 

তিনি জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম মিয়ার ছেলে। জেলা শহরের মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনিও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তারা উভয়ই তালতলায় পৃথক দুই ছাত্রাবাসে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহসান হাবিব আকাশ বলেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি ও লাতিফুর কুড়িগ্রাম শহরের হাসপাতাল চিকিৎসাধীন দুই রোগীকে রক্ত দেওয়ার উদ্দেশে ছাত্রাবাস থেকে বের হই। আমি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলাম। শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি এক প্রসূতিকে আমি এবং জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীকে লতিফুরের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল। তালতলা মোড়ে পৌঁছালে একটি ট্রলি ওভারটেক করি। এর সামনে এক ব্যক্তি বাইসাইকেলে করে ঘাসের বস্তা নিয়ে আসছিলেন। তার ঘাসের বস্তাটি আমার মোটরসাইকেলের হাতলে লাগলে দুই বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে পড়ে যাই। এ সময় পেছন থেকে আসা ট্রলিটি আমাদেরকে চাপা দেয়। লাতিফুর পেছনে থাকায় সে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আকাশ বলেন, আমার সমস্ত শরীর ব্যথা করছে। চোখ এবং কানে প্রচণ্ড ব্যথা বোধ করছি।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. বিভুরঞ্জন সরকার বলেন, আহত দুই ছাত্রের মধ্যে লাতিফুরের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাকে পরে রংপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। অপরজন হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের এএসআই জাকিরুল ইসলাম বলেন, নিহত কলেজছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রলি কিংবা চালক কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি।