উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়ে কাওছার ফিরছেন লাশ হয়ে

কাওছার হামিদ আলী
কাওছার হামিদ আলী

প্রায় ১২ বছর আগে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে কাওছার হামিদ আলী (৩৫) লন্ডনে গিয়েছিলেন। এর প্রায় ৭ বছর পর তিনি সেখান থেকে ফ্রান্সে পাড়ি দেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। কোনো একদিন দেশে ফিরবেন; তবে তা হবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে। স্বপ্ন ছিল দেশে ফিরে বিয়ে করে নতুন স্বপ্ন বুনবেন। এমন স্বপ্ন শুধু তার নয় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখছিলেন  বাবা-মাও। কিন্তু, দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও হামিদ আলীর বাড়ি ফেরা হয়নি। আর কখনো হবেও না। কারণ- স্বপ্ন বেঁচে থাকলেও বেঁচে নেই হামিদ। তবে তিনি দেশে ফিরছেন; কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে নয় বরং লাশ হয়ে।

প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক প্রথমে কাওছার হামিদ আলীর ওপর হামলা করে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে। এরপর হামলাকারীরা তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এতে হামিদ আলী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সেখানকার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয় গুরুতর আহত অবস্থায়। সেখানে তিনি কোমায় ছিলেন ২৩ দিন। সব স্বপ্ন আর আশাকে পাশ কাটিয়ে তার জীবন প্রদীপ নিভে গত ১৩ অক্টোবর। আর বিষয়টি তার পরিবার জানতে পারে গত ২০ অক্টোবর। ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাস তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়।

অন্যদিকে ফ্রান্সে খুন হওয়ার প্রায় দেড় মাস পর আজ সোমবার (৫ ডিসেম্বর) কাওছার হামিদ আলীর মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শুক্রবার তার মরদেহ উড়োজাহাজে বাংলাদেশের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে ফ্রান্স থেকে। তার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে ফ্রান্সের অভারভিলা বাংলাদেশি জামে মসজিদে। বিকেলের দিকে কাওছার হামিদ আলীর মরদেহ ঢাকায় আসলে তা গ্রহণ করবেন তার বাবা আবুল হোসেন। তিনি ছেলের মরদেহ নেবার জন্য ঢাকায় এসেছেন মৌলভীবাজার থেকে।

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়

ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত আবুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, ‘লেখাপড়ার জন্য আমার ছেলে লন্ডন গিয়েছিল প্রায় ১২ বছর আগে। এর মধ্যে সে আর একবারও দেশে আসে নাই। এরমধ্যে গত প্রায় ৭ বছর আগে ছেলে লন্ডন থেকে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছিল। তিনি আরও জানান, আমার আশা ছিল দেশে এলে তাকে বিয়ে দেব। কিন্তু তা আর কোনোদিন হবে না। দেশে আমার ছেলের মরদেহ আসবে’- যুক্ত করেন আবুল হোসেন।

প্রবাসী সূত্রগুলো জানিয়েছে, তার হত্যায় জড়িতদের ধরতে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। স্বজন ও প্রবাসীরা হামিদ আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ জানিয়েছেন, সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে হামিদ আলীর মরদেহ দেশে পাঠানো হয়েছে। সোমবার ভোরে মরদেহ দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।