খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩ বছরে পা রাখবে কাল

বধ্যভূমির ওপর গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ৩২ বছর পূর্ণ করে ৩৩ বছরে পদার্পন করবে আগামীকাল শুক্রবার (২৫ নভেম্বর)। শান্তি প্রিয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ বৈচিত্র‍্যময় ক্যাম্পাস খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো সংঘর্ষ। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আপামর মানুষের নিরলস প্রচেষ্টা ও ত্যাগ। 

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘শিখুন, নেতৃত্ব দিন এবং বাঁচুন’ স্লোগান নির্ধারণ করেছে। প্রতিবছর এ দিনটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে।

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারী নামক স্থানে স্থাপিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ভবনের নাম বিধৃত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ তথা বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নামে।

ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই প্রথম চোখে পড়বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুউচ্চ ম্যুরাল, যার গায়ে উৎকীর্ণ আছে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এছাড়া রয়েছে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবন, ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন, আচার্য জগদীশচন্দ্র একাডেমিক ভবন, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন। এমনিভাবে  প্রত্যেকটি আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনার প্রবেশ পথেই শুধু দেখতে পাবেন  নাম লেখা। এ যেনো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিজস্বতা। বঙ্গমাতা হলে রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরাল। রয়েছে কটকা স্মৃতিস্তম্ভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহদাকার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি স্থপত্যশৈলী চমৎকার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে এ ভবনটির। যার ছাদ দৃষ্টিনন্দন টেনসাইল মেমব্রেনে তৈরি। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, চারুকলাসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১২ যা বিশ্বমানের। ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ৫৪:৪৬ যা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নতুন ভিশন, মিশন এবং রিসার্চ স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের ৩২টি অরাজনৈতিক সংগঠন আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার সাথে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, দক্ষতা ও  সাংগঠনিক মনোবল অর্জন করে। তারাই সারাবছর উৎসবমুখর রাখে ক্যাম্পাস। 
 
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০.১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এরপর রয়েছে কালজয়ী মুজিব ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। মুক্তমঞ্চে গত বছরের অর্জন ও আগামী বছরের পরিকল্পনা উপস্থাপন কর্মসূচি রয়ছে বিকাল ৪টায়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সব হল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য বর্তমান সরকারের অনুমোদিত চারশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০ তলা জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, সুলতানা কামাল জিমনেশিয়াম, টিএসসিসহ ২৪টি অবকাঠামোর কাজ। নির্মাণ কাজ তত্ত্বাবধানে এখানে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে আছে একটি কমিটি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের গতি ত্বরান্বিত করতে সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর আওতায় হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আস্থার জায়গা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। শীঘ্রই শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশ্বসারণীতে স্থান করে নেবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২ এর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সে প্রত্যাশার সাথে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।