পর্যটনের অপার সম্ভাবনা চরফ্যাশনে

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে ভোলা জেলার চরফ্যাশনে। এই এলাকা পর্যটকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।চরফ্যাশনের বেতুয়ায় মেঘনার পাড়ে অবস্থিত প্রশান্তি পার্ক ও তেতুলিয়ার পাড়ে অবস্থিত খেজুরগাছিয়া মিনি কক্সবাজার।শঙ্খচিল আর মেঘ ছুয়ে যাওয়া বলাকাদের ডানা ঝাপটে দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটে চলা এবং মেঘনার অসীম জলরাশি আর নদীতটে ঢেউয়ের দোলায় চিকমিক করা বালি কণা ছুয়ে দেখতে যে কারো মন ছুটে আসবে এখানে।

মাঝি মাল্লাদের মাছ ধরার ট্রলার ও রঙ্গিন কাপড়ে পাল তোলা নৌকার ছুটে চলা যেন খুজেঁ ফিরে নিড় হারা পাখিদের আপন ঠিকানা। নয়ন মেলে আকাশপানে তাকালেই শত শত প্রজাপতির ডানায় দিগন্তে মিশে যাওয়া নীল আকাশ ছুয়ে যাবে আপনার হারানো মনকে।

কিছুক্ষণের জন্য হলেও নদীর কূলে সুরে সুরে গেয়ে উঠতে বাধ্য হবেন “আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব” হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে, সেই অঙ্গিকারের রাখী পরিয়ে দিতে, কিছু সময় রেখো তোমার হাতে”। হাতেহাত রেখে হোক অথবা বালি আর জলের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বই হোক খেজুরগাছিয়ার মিনি কক্সবাজারের বিচে বন্ধুদের সঙ্গে একটু প্রশান্তি খুঁজতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকদের ভিড় পড়ে যায় ঈদ,পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে।

উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ খেজুরগাছিয়ায় রয়েছে দীর্ঘ আয়তনের বিচ এবং নদী সংলগ্ন পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ার ফুলসহ নানান রকমের উদ্ভিদের সবুজ আচ্ছন্নে ঘেরা কেওড়া ও ম্যানগ্রোভ বন। পাশাপাশি সমুদ্রের পানে ছুটে চলা রং বেরঙ্গের নৌকা ও ট্রলারে করে মাঝিদের জাল ফেলার ছবিও যেন শিল্পীর তুলিতে জলচিত্রের মতো মনোমুগ্ধকর আঁকা এক প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।

অন্যদিকে বেতুয়ায় মেঘনার পাড়ে গড়ে ওঠা প্রশান্তি পার্কের রেস্টিং বেঞ্চ আর গোলঘরসহ নদীর কিনারায় রেলিং ধরে চা ও কপি’তে চুমুক দিয়ে জলের আলতো ঢেউয়ে শতশত চিলের মাছ শিকারের চিত্র দেখতেও মন্দ লাগবেনা কারোরই। এছাড়াও বেতুয়ায় ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর বাস্তবায়নে নির্মিত বেড়ি বাঁধের ঢালে ঘুরতে আসছে শত শত পর্যটক। প্রশান্তী পার্কে রয়েছে গোলপাতার বন ও নানান রকমের পাকপাখালীসহ সামুদিক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ।

এছাড়াও চরফ্যাশন থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গপোসাগরের কুলঘেঁষে জেগে ওঠেছে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট কুকরি-মুকরি সী বিচ এবং তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত। ঢাকা নদীবন্দর থেকে চরফ্যাশন টু বেতুয়ার লঞ্চে সরাসরি পর্যটকরা ঘুরতে আসছে চরফ্যাশনে। উপজেলা সদরে রঙ্গিন ঝর্নার ফ্যাশন স্কয়ার ও শেখ রাসেল শিশু বিনোদন পার্ক ঘুরে ২২৫ ফুটের উচ্চতায় ১৬ তলা বিশিষ্ট জ্যাকব টাওয়ার পরিদর্শন করেই পর্যটকদের গন্তব্য থাকে কুকরি ও তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত পানে।

কুকরি-মুকরির কেওরা ও ম্যানগ্রোভ বনে রয়েছে ২৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ, চিত্রা হরিণ, বানর ও বুনো মহিশসহ ৪৫ প্রজাতির প্রাণী এবং প্রায় ২০৯ প্রজাতির পাখি। এখানকার গহীন অরণ্যের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সুন্দরবনের আদলে খালের পাড়ে রয়েছে এক নৈসর্গিক দৃশ্য। বাংলাদেশের মালদ্বীপ খ্যাত প্রকৃতির এ স্বর্গরাজ্যে পর্যটকদের জন্য রয়েছে রেস্টিং বেঞ্চ, ঝুলন্ত সেতু, জিপ ট্রাকিং, মাকরশার জাল, চাইনিজ রেস্তোরাসহ হোম স্টে সার্ভিস।

অন্যদিকে বাংলাদেশের একমাত্র ভার্জিন দ্বীপের সী- বিচ হিসেবে পরিচিত তাড়ুয়া সমুদ্রের অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে রয়েছে লাল কাকড়া ও সমুদ্রের নোনা জলের ঢেউ আর প্রশান্তি যোগানো বৃক্ষরাজির পাশাপাশি দিগন্ত বিস্তৃত অতিথি পাখির মনোমুগ্ধোকর বিচরণ। চরফ্যাশনের এসব বিনোদন স্পটে প্রতিদিন হাজার, হাজার পর্যটক আসছে।

স্থানীয় পর্যটকরা বলছেন, অপার সম্ভাবনাময় চরফ্যাশনের উপকূলীয় এলাকাগুলো যদি অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ ও পর্যটক আকর্ষণে আরও বহুমাত্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাহলে কুকরি-মুকরি ও তাড়ুয়া সমুদ্র সৈকত এবং খেজুরগাছিয়াসহ বেতুয়া প্রশান্তী পার্কের পর্যটন এলাকা থেকেও সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

চরফ্যাশনের উপকূলীয় অঞ্চলকে বিনোদনের অবকাঠামোয় গড়ে তোলার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলকে সম্ভাবনাময় পর্যটনের দ্বারপ্রান্তে নিতে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি চরফ্যাশন ও মনপুরা অঞ্চলে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের পাশাপাশি অসংখ্য বিনোদনমূলক স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও কুকরি-মুকরি ও তারুয়া সমুদ্র সৈকতকে ইকো টুরিজমের আওতায় আনা হচ্ছে।

উপকূল সুরক্ষায় উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে রঙ্গিন পর্যটনমূলক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললেই দক্ষিণের জনপদ চরফ্যাশন হবে পর্যটনের এক সম্ভানার নতুন দিগন্ত। এমনটাই মনে করছেন উপজেলার পর্যটন বিশ্লেষকগণ।