রক্তদানের আগে যা জানা জরুরি

টিপস ও টিউটোরিয়াল
রক্তদান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব মানুষই স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারবেন। মানবদেহের মোট ওজনের শতকরা সাত ভাগ রক্ত থাকে। সাধারণত, একজনের দেহ থেকে একবারে এক ইউনিট রক্ত নেওয়া হয়। এই রক্ত দাতার দেহে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এর ফলে দাতার কোনো ক্ষতিও হয় না। রক্তে থাকে রক্তকণিকা, প্লেটলেট ও প্লাজ়মা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এক ইউনিট রক্ত থেকে এই তিনটি জিনিসই ব্যবহার করা যায়। 

অর্থাৎ বলা যায়,এক ইউনিট রক্ত কম করে তিনজন মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। কোনো রক্তদাতা চাইলে, সমগ্র রক্ত বা হোল ব্লাডও দিতে পারেন, অথবা রক্তের বিশেষ উপাদান যথা প্লেটলেটও দান করতে পারেন।  তবে ইচ্ছা থাকলেও যে কেউ রক্ত দিতে পারবেন না। এছাড়া, রক্তের গ্রুপ যদি ভুল হয়, তবে গুরুতর শারীরিক সমস্যা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।তবে কিছু শর্ত রয়েছে, যার ফলে রক্তদান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তাই রক্তদানের আগে নিয়ম কানুন জেনে নেওয়া জরুরি।

আদর্শ রক্তদাতা

* বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে
* দৈহিক ও মানসিকভাবে সুস্থ এবং স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে আগ্রহী
* ওজন ন্যূনতম ৪৫ কেজি বা ১০০ পাউন্ড
* নাড়ির গতি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকে
* দেহের তাপমাত্রা অবশ্যই স্বাভাবিক অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৬ ফারেনহাইটের মধ্যে থাকতে হবে (জ্বর  অবস্থায় রক্ত দেওয়া যাবে না)
* ওষুধ ব্যতীত রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে (সিস্টোলিক ১০০ থেকে ১৬০ মিমি মার্কারি এবং  ডায়াস্টোলিক ৬০ থেকে ১০০ মিমি মার্কারির নিচে) থাকতে হবে
* হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ হতে হবে (পুরুষদের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫ গ্রাম/ডিএল এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৫ গ্রাম/ডিএল)
* ক্রনিক ডিজিজ যেমন- উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং যেকোনো জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
* যেসব রক্তদাতা অ্যাসপিরিন বা এনএসএইড সেবন করেছেন, তাদের অন্তত তিন দিন ওষুধ বন্ধ রেখে রক্তদান করতে হবে।
* রক্তদাতা হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং সিফিলিসমুক্ত কি না, বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে

কাকে রক্ত দেবেন

নিকট আত্মীয়দের রক্তদানে নিরুৎসাহিত করা হয়। এইচএলএ (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন) সম্পর্কিত জটিলতার কারণে তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এমনকি জীবন সংশয়ও হতে পারে।

আরও পড়ুন: সাংসারিক যেসব কাজে শরীরচর্চা করা যায়

কতদিন পরপর রক্ত দিতে পারবেন

* একজন সুস্থ, সবল মানুষ চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারবেন।
* নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ছয় মাস পর রক্ত দিতে বলা হয়।

রক্তদানের পর করণীয়

* রক্তদানের ১ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে খাবার এবং অন্তত ৫০০ মিলি পানীয় গ্রহণ করুন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় রক্তদান করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
* রক্তদানের পরের ২৪ ঘণ্টায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ গ্লাস পানি বেশি পান করবেন।
* রক্তদানের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নেবেন।
* রক্তদানের পর ঝুঁকিপূর্ণ ও ভারী কাজ যেমন- গাড়ি চালানো, ব্যায়াম করা ইত্যাদি থেকে অন্তত একদিন     বিরত থাকবেন।
* রক্তদান পরবর্তী কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ রক্ত সংগ্রহকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।

নারীদের জন্য নির্দেশনা

গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী বা গর্ভপাতের পর ছয় মাস পর্যন্ত রক্ত দান করা যাবে না।
মায়েরা দুগ্ধদানের সময় রক্তদানে সাময়িক বিরত থাকবেন।