নাসায় আমার স্বপ্ন পূরণের জন্যে স্ত্রী তার চাকরি ছেড়ে দেয়

মো. মিলন হোসেন ও তার স্ত্রী আফরিন মিলন
মো. মিলন হোসেন ও তার স্ত্রী আফরিন মিলন

মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন মো. মিলন হোসেন। সম্প্রতি তিনি ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নাসার গ্লেন রিসার্চ সেন্টারে উপাদান ও কাঠামো বিষয়ে পরিদর্শক গবেষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি তার শৈশব-বেড়ে উঠা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবন এবং নাসায় ডাক পাওয়ার সার্বিক বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছোটবেলা কোথায় কেটেছে? কেমন ছিল আপনার বেড়ে ওঠা
মো. মিলন হোসেন: আমার জন্ম শালিখা, মাগুড়ায়। আমি মাধ্যমিকে পড়েছি শালিখা থানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিকে ড. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ পড়েছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পর চলে আসলাম মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিবারে কে কে আছেন? 
মো. মিলন হোসেন: বাবা-মা-স্ত্রী এবং আমার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমাদের পরিবার। আর আমার ছোট একটা বোন রয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছোটবেলায় সবারই স্বপ্ন থাকে। তখন কিসের স্বপ্ন দেখেছিলেন?
মো. মিলন হোসেন: একমাত্র স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। যদিও উচ্চ মাধ্যমিকের সময় বায়োটেকনোলজির প্রতি অনেক ভালোলাগা কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে ভালো কিছু এবং চাকরির সুযোগের কথা চিন্তা করে সুযোগ পেয়েও পড়া হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন কি ছিলো?
মো. মিলন হোসেন: বাবা-মা চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। আমার পিএইচডি আসার আগ পর্যন্ত যা কিছু করেছি সব কিছুই বাবা-মা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই করেছি। তবে এরসঙ্গে আমার ভালো লাগা, স্বপ্ন এগুলোও মিল ছিল।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করার পর তারা চেয়েছিল আমি যেন ফার্স্ট হই এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হই। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য চেয়েছিল আমি যেন জাপান যাই কিন্তু পরে কুয়েটে চাকরি হলে আমি বাইরে যাবার প্ল্যান কয়েক বছর স্থগিত করি। তারপর বাবা-মা চেয়েছিল আমি যেন আমেরিকা চেষ্টা করি পিএইচডির জন্য। পরে আমি আমেরিকা থেকেই পিএইচডি শেষ করি গত বছর।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে জানতে চাই
মো. মিলন হোসেন: আমি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএস এবং এমএস করেছি। তুলনামুলক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে এবং টেক্সটাইলের প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্ট হিসাবে আমাদের তেমন ল্যাবের সুবিধা ছিল না। কিন্তু সেই শূন্যস্থানটা বিভাগের শিক্ষকরা খুবই দুরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের সাথে কোলাবরেশন করে পূরণ করেছিলেন।

অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এইটা শুধু কাগজে কলমে কোলাবরেশন না, আমার এমএসসির সুপারভাইজার ছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত বিজ্ঞানি ড. মোবারক আহমদ খান। ড. মোবারক আহমদ খান ও ড. রুহুল খানের সঙ্গে ইন্সটিটিউট অব রেডিয়েশন এবং পলিমার টেকনোলজিতে গবেষণার হাতে খড়ি। আমার জীবনের চলার পথ অনেক সহজ করে দিয়েছিলেন তারা।

আজকে এখানে আসার পেছনে এই সুযোগ অন্যতম ভুমিকা রেখেছিল এবং গতানুগতিক টেক্সটাইলের বাইরে এসে নতুনভাবে চিন্তা করতে শিখেছিলাম। ২০১২ সালে আমি চায়না থেকে কার্বন-কেভলার ফেব্রিক নিজের টাকায় কিনে ড. মোবারক আহমদ খানের অধীনে তখন কম্পোজিট নিয়ে গবেষনা করি। এছাড়া আমি ২০১০ সালে ইউজিসি মেরিট স্কলারশীপ, ২০১৩ চ্যান্সেলর স্বর্নপদক এবং প্রধানমন্ত্রী স্বর্নপদক পেয়েছি।

আরও পড়ুন: নাসায় চাকরি পেলেন মাভাবিপ্রবির মিলন, সব কৃতিত্ব দিলেন স্ত্রীকে

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চলার পথে কেমন প্রতিবন্ধকতা পেয়েছেন?
মো. মিলন হোসেন: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষে থাকাকালীন গবেষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু তখন বাংলাদেশে টেক্সটাইলে সত্যিকারের গবেষণা তেমন কেউ করতো না। এছাড়া কিভাবে শুরু করবো সেটাও জানার উপায় ছিল না। যেহেতু টেক্সটাইলে কেউ তেমন গবেষণা করতো না এবং তখন দেশে টেক্সটাইলের উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল না, তাই আমি অন্য বিষয়ে যেমন ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং/কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষনার চিন্তা করি।

আবার তখন একটা বড় সমস্যা ছিল যে টেক্সটাইল থেকে এই সব বিষয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিতে চাইতো না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই আমি টেক্সটাইলে মাস্টার্স করি। কিন্তু ইনস্টিউট অব রেডিয়েশন এবং পলিমার টেকনোলজিতে গবেষণার সুযোগ সব ঘাটতি অনেকটাই কমিয়ে দেয়।

গাইডলাইনের অভাব ছিল সব থেকে বড় বাধা। যেহেতু আমি ছিলাম প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্ট এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয় নতুন হওয়াতে অন্য ভালো বিশ্ববিদ্যলয়ের কেউ তেমন সাহায্য করতে চাইতো না। যেমন আমি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন টেক্সটাইলের প্রফেসরের কাছে একবার তার কাজের ব্যাপারে একটু জানতে চেয়েছিলাম যে কি ফাইবার নিয়ে কাজ করছে? কিন্তু সে উত্তর না দিয়ে তার কাজ করতে থাকে।

আমি বলব দিক নির্দেশনা দেবার মত তেমন কাউকে পাইনি। যেটা হয়তো আমার চলার পথকে আরো অনেক সহজ করতে পারতো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কাদের কাছ থেকে?
মো. মিলন হোসেন: আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে। কারণ আমি দেখেছি তারা কত কষ্ট করেছেন আমার জন্য। সেটাই অনেক বড় অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। যেমন আমাকে মফস্বলের কলেজের পরিবর্তে যশোর শহরের কলেজে পড়ানোর সিদ্ধান্ত আমার বাবা অনেকের পরামর্শ উপেক্ষা করে তখন একাই নিয়েছিল। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার হবার জন্য অনেকেই তখন বলেছিল শহরের কলেজে পড়িয়ে টাকা খরচ না করে সঞ্চয় করলে পরে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে কাজে দেবে।

তখন আমার বাবা বলতেন, আমার সন্তানই আমার সঞ্চয়। তাই আমি সবসময় চেয়েছি তাদের কষ্ট এবং প্রচেষ্টা যেন বৃথা না যায়। এছাড়া অনুপ্রেরণার বেশিরভাগ জুড়ে কিছু শিক্ষকরাই ছিলেন, বিশেষ করে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি, কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি—বিভিন্ন ব্যাপারে ড. জলিল স্যার অনেক সহযোগীতা করেছেন। আমার প্রথম কনফারেন্স পেপার জন্য ড. ইকবাল মাহমুদ স্যার অনেক সাহায্য করেছিলেন।

এছাড়া বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। উচ্চ শিক্ষার আবেদনের জন্য রিসার্স প্রপোজাল লেখার সময় ড. আবু সাইদ (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া) অনেক সাহায্য করেছিলেন। আমি ২য় মাস্টার্স করার জন্য চেষ্টা করছিলাম এবং ২০১৪ সালে ইরাসমাস মুন্ডুস থেকে ২টা স্কলারশীপ পায়, তখন ড. আবু সাইদ এবং ড. মোবারক আহমদ খান স্যারের পরামর্শে আমি সেই স্কলারশীপ বাতিল করে দেয় এবং পরে পিএইচডির জন্য চেষ্টা করি।

আরো অন্য একটি ঘটনার কথা বলতেই হয়। মাওলানা ভাষানীতে আমাকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ না দেয়াতে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম, পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমি আপু (বর্তমানে কানাডায় শিক্ষক হিসাবে কর্মরত) অনেক প্রেরণা দিয়েছিলেন, পথ দেখিয়েছিলেন।

সেই সময়ে আমি পিপলস ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করছিলাম। আমার সেই ঘটনার পর তখন বিভাগের প্রধান তাহের আলি স্যার স্থায়ীভাবে আমাকে বিভাগে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। এই দুজন মানুষের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ এবং তখন তাদের পাশে না পেলে হয়ত আমার জন্য পথ অনেক বেশি কঠিন হয়ে যেত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নাসায় যোগ দেয়ার গল্পটা সংক্ষেপে জানতে চাই?
মো. মিলন হোসেন: আমার পিএইচডি শেষের দিকে আমি পোষ্টডকের চেষ্টা করছিলাম। আমি চেয়েছিলাম আইভি লিগের কোন বিশ্ববিদ্যালয় অথবা এমআইটিতে যোগ দিতে। সেই হিসাবে আবেদন করার মাঝে কর্ণেল ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক পাই এবং ইন্টারভিওয়ের সময় প্রফেসর জানায় যে নাসার একটা প্রজেক্ট আছে সেটাতে আমি কাজ করবো।

নাসার প্রজেক্টটা ন্যানোকম্পোজিট নিয়ে তাই আমাকে শুধু একটা ছোট ইন্টার্ভিওয়ের পরেই কর্নেলের প্রফেসর পোষ্টডক হিসাবে নিয়োগ করেন। এই প্রজেক্টের কোলাবরেটর নাসার একজন গবেষক এবং তার সাথে মিটিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয়। প্রজেক্টা ২০৩০ সালে চন্দ্র অভিযান এবং সেখানে মানুষের বসবাসের লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা হয়েছে।

সেজন্য এই প্রজেক্টে আমি উচ্চ তাপ পরিবাহি এবং তড়িত-চুম্বক বিকিরন প্রতিরোধী ন্যানোকম্পোজিট তৈরী করার কাজ করছি। কিন্তু কর্নেল এই ম্যাটেরিয়ালসের প্রসেসিং এবং পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় আমাকে নাসাতে যেতে বলা হয়। সেই হিসাবে আমি আবেদন করি এবং ১ মাস পরে আমার আবেদন অনুমোদন করা হয় Visiting Researcher হিসাবে। এই প্রজেক্টটি তিন বছরের এবং আমি নাসা এবং কর্নেল দুই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেকেরই নাসায় যোগ দেয়ার স্বপ্ন থাকে। তাদের জন্য কি পরামর্শ থাকবে?
মো. মিলন হোসেন: নাসাতে অনেকভাবেই কাজ করা যায়। যেমন ইন্টার্নশীপ, গবেষক, পোষ্টডক। স্থায়ীভাবে এবং নাসার অফিসে সরাসরি কাজ করতে হলে আমেরিকান নাগরিক হতে হবে। পৃথীবির অন্যতম কঠিন নিরাপত্তার জায়গা নাসা। এমনকি নাসাতে আমার যে বস তার নিজেরও অন্য বিভাগে যাবার অনুমতি নেই। নাসার মোট ১০টা সেন্টার আছে।

স্পেস সেন্টারগুলোতে (যেটা লন্সিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়) কোন রিসার্স হয় না। আর বাকি ৪-৫টা রিসার্স সেন্টার আছে সেখানেই মূলত গবেষণাগুলো হয়ে থাকে। তবে নাসার কাজের দিক খুবই নির্দিষ্ট এবং কারো যদি একই বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে নাসা সেটা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। আরো একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হল, নাসাতে চাকরির বিজ্ঞাপন অনেক ক্ষেত্রে খুব স্বল্প সময়ের জন্য হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে মাত্র ১ সপ্তাহ থেকে ১০ দিন। তাই নিয়মিত www.usajobs.gov ওয়েবসাইটে খোজ রাখা যেতে পারেন। আর যদি নাসার কোন গবেষক রিকমেন্ডেশন দেয় তাহলে তার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেকে ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। অন্যদিকে নাসায় সাফল্য আপনি আপনার স্ত্রীকে সব কৃতিত্ব দিয়েছেন।
মো. মিলন হোসেন: এটা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথ অনেক কঠিন। দেশে বিএসসি, এমএসসির সময়ে বাবা-মায়ের অনেক প্রেরণা, সমর্থন থাকে। আমার বাবা-মা তাদের জীবনের সব বাজি রেখেছিল আমার পড়ালেখার পথের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে।

কিন্তু পিএইচডির বিষয়টা অন্যরকম। যারা এর ভেতর দিয়ে যায়নি তারা কোনদিন বুঝবে না। গবেষণার সমস্যা, মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা, পড়ালেখা—এইসব কিছু প্রতিনিয়ত বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করা যায় না। এছাড়া ব্যর্থতা স্বীকার করে বন্ধুদের কাছে এই লেভেলে কেউ ছোট হতে চায় না। সেক্ষেত্রে জীবনসঙ্গিনী অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

যাইহোক, আমার স্ত্রী অনেক ভালো চাকরি করতো। কাজের চাপ কম এবং বাসায় বসেই অফিস করতে পারতো। একইসাথে আমেরিকাতে সে তার পিএইচডির কোর্সওয়ার্কও শেষ করে ফেলেছিল। ঠিক এ সময়ে আমি কর্নেলে পোষ্টডকের অফার পাই এবং পরবর্তীতে নাসাতে কাজের সুযোগ আছে সেটা ভেবে আমি কর্নেলে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলাম।

আমার এবং আমার স্ত্রী দুই জনেই নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতেছিলাম এবং আমার স্ত্রীর চাকরিও নর্থ ক্যারোলাইনাতে ছিল। কিন্তু কর্নেল ইউনিভার্সিটি অনেক দূর নিউ ইয়র্ক থেকে। আমাদের ৩ মাসের মেয়েকে নিয়ে কারো পক্ষেই একা কোথাও থাকা সম্ভব ছিল না। কোন একজনকে তাই সুযোগ ছেড়ে দিতে হত এবং আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয় সে তার চাকরি ছেড়ে দেবে।

সেসময়ে সে চাকরি না ছাড়লে আমার পক্ষে কর্নেল ইউনিভার্সিটির পোষ্টডকে যোগ দেয়া সম্ভব হত না এবং পরবর্তীতে আমি নাসাতেও সুযোগ পেতাম না। আমি নাসাতে সুযোগ পাবো সেটা ছিল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। কিন্তু আমার স্ত্রী তার নিশ্চিত ভালো চাকরি সে ছেড়ে দিয়েছিল যেন আমি আমার স্বপ্নপূরন করতে পারি। আমি অবশ্যই তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ এবং নাসাতে সুযোগের পেছনে তার ত্যাগ অনস্বিকার্য এবং সেটা ছাড়া অসম্ভ ছিল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের জন্য কি করতে চান?
মো. মিলন হোসেন: আমি কুয়েটে সহকারি অধ্যাপক ছিলাম এবং চেয়েছিলাম টেক্সটাইলের শিক্ষা ব্যবস্থাতে অনেক পরিবর্তন আনতে। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি এবং পারিবারিক কারণে আমি শেষ মুহুর্তে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি।

কিন্তু সব সময় চেয়েছিলাম আমার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে। তাদেরকে বড় স্বপ্ন দেখাতে এবং সেভাবে তাদেরকে প্রস্তুত করতে। সে লক্ষ্যে আমি ২০২০ সালে iDREAM (www.mhidream.com) ল্যাব শুরু করি। প্রধানত গবেষণার মূল বিষয়গুলোতে তাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করি। গবেষনা প্রবন্ধ লেখার ট্রেইনিং দিয়েছি।

গত ২ বছরে iDREAM-এর হয়ে আমার সাথে প্রায় ২০-২৫ জন মত ছাত্র-ছাত্রী কাজ করেছে। যারা অনেক সময় নিয়ে লেগেছিল তাদের বেশিরভাগই এখন আমেরিকাতে পিএইচডি করছে। আর বাকি কিছু আছে ইউরোপের দেশগুলোতে। যেহেতু আমি নিজেই শেখার মাঝে আছি তাই আমি প্রধানত চেষ্টা করি যারা কিছুই জানে না তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে, তাদেরকে শেখাতে। অন্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য পথ যত সহজ, টেক্সটাইলের জন্য বিষয়টা ভয়ানক কঠিন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মো. মিলন হোসেন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও অনেক শুভ কামনা রইলো।