ছাত্রীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি
আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আজ। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার বেড়েই চলেছে। এ বছরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় সবার শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। আর প্রেম-ঘটিত কারণেই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হচ্ছে।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) এমন তথ্যই জানিয়েছে আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করা আঁচল ফাউন্ডেশন। এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার; আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি?’ শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে সংস্থাটি।
সংস্থাটি বলছে, তরুণ প্রজন্মকে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যে মানসিকভাবে তৈরি করা এবং তাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল করে তোলার পাশাপাশি আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি অন্যতম লক্ষ্য দেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এটি তরুণ প্রজন্মের উপর জরিপ পরিচালনা ও আত্মহত্যার তথ্যও সংগ্রহ করে, যেন তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা নিরূপণ করা যায়। সেই সূত্র ধরে দেশের দেড় শ’ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে এবারের সকল প্রকার আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রেমঘটিত কারণে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বেশি
সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসের আত্মহত্যার সংখ্যা আমাদের জন্য উদ্বেগ তৈরি করতে সক্ষম। এ বছরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। দীর্ঘ আট মাসব্যাপী চলমান ডাটা সমন্বয়ের নানাবিধ উল্লেখযোগ্য ফলাফল উপস্থাপন করেন ফারজানা আক্তার লাবনী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
সংখ্যাতেই আতঙ্কের ছাপ: পত্রিকা থেকে সংগৃহীত আত্মহত্যার ঘটনা সংখ্যা অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন আত্মহননের পথ বেছে নেয় যারা তাদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা, নার্সিং প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন। লক্ষ্যণীয় যে, ৩৬৪ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১৯৪ জনই ছিলেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা ৭৬ জন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহনন-কারীর সংখ্যা ৫০ জন। তবে মোট আত্মহনন-কারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও ছিলেন ৪৪ জন।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ: সমীক্ষায় উঠে আসে বিগত আট মাসে মোট আত্মহনন-কারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৬০.০০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থী ৪০.০০ শতাংশ। কলেজ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয় যাদের মাঝে ৪৬.০৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ নারী। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী বিগত আট মাসে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৭.০১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। এমনকি মাদরাসা-শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে যা সংখ্যায় ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০.৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।