০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৪৩

শাওন কার?

নিহত শাওন প্রধান  © সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শাওন প্রধানকে যুবদল কর্মী বলে দাবি করছে বিএনপি। অপরদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শাওন প্রধানের বাড়ির সামনে শাওনকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাস্টার জানান, শাওন আমাদের এলাকার ছেলে। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর ভাতিজা। শাওন যুবলীগের রাজনীতি করেছেন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।

অন্যদিকে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেক বলেন, শাওন আমার সঙ্গে যুবদলের রাজনীতি করত। ফতুল্লা থানা যুবদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে তার নাম রয়েছে।
 
এদিকে, শাওন গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে মিছিলের অগ্রভাগের ছবি বিএনপি নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। এ ছাড়া শাওনের অতীত বিএনপি কর্মকাণ্ডের একাধিক ছবিও পোস্ট করা হয়েছে ফেসবুকে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জানিয়েছেন, শাওন যুবলীগের কর্মী নয়। শওকত আলী সম্পর্কে শাওন প্রধানের চাচা হন। শাওন শওকত আলীর চাচাতো ভাই মৃত সাহেব আলীর ছেলে।

শওকত আলী বলেন, শাওন যুবলীগ কর্মী নয়, যুবদল কর্মীও নয়। সে কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। যদি যুবদল কর্মী হয়ে থাকে, আজকের (বৃহস্পতিবার) মিছিলে গিয়ে থাকে, তবে সেটা আমি জানি না।

এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যুবদলের মিছিলে সামনের সারিতে থাকা শাওনের ছবি দেখালে শওকত আলী ছবিটি শাওনের বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছবিতে শাওনকে দেখা যাচ্ছে। এই ছবি তো মুছে ফেলা যাবে না।’

শাওনকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ বিষয়ে বলেন, ‘যারা এটা বলতেছে, তারা সঠিক তথ্য জেনে বলেনি।’

জানা গেছে, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন এবং তিনি যুবদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া শাওনের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি নিজেকে যুবদল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন।

আরও পড়ুন: বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে যুবদল কর্মী নিহত

শাওনের পরিবার সূত্রে পাওয়া তাঁর ফেসবুক আইডি ঘুরে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘Shawon ahmed (রাজা) ’ নামে তাঁর ফেসবুক আইডির ‘বায়ো’তে শাওন লিখেছেন, ‘কর্মীর চেয়ে বড় কোন পদ নাই/সাক্ষী দেহের ঘামে ভেজা নগরীর রাজপথ/ফতুল্লা থানা যুবদল জিন্দাবাদ।’

সর্বশেষ গত ৩১ মে শাওনের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও যুবদল নেতা সাদিকুর রহমানের একটি ছবি শেয়ার করেছেন।

ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘নিশি রাতের ভোট চোরদেরকে বলে দিও ২০২৩ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশা আল্লাহ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল নারায়ণগঞ্জ জেলা।’

নিহত শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান গণমাধ্যমকে জানান, এর আগেও কয়েকবার শাওন বিএনপির কর্মসূচিতে গেছে। আমরা তাকে শাসন করেছি। তারপরও সে গোপনে রাজনীতি করত।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় শাওন প্রধানের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দিবাগত রাত দেড়টায় জানাজা শেষে নবীনগর কেন্দ্রীয় সূর্য্যাত আলী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

তার আগে রাত সোয়া বারোটায় নিহত শাওনের লাশ বাড়ি নিয়ে গেলে তাঁর মা ফরিদা বেগমসহ প্রতিবেশী ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিলাপ করতে করতে ফরিদা বেগম তাঁর সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেন। বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওনের মৃত্যু হয়।