ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, নতুন যা পাওয়া যাবে

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী  © ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চারদিনের সরকারি সফরে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিবসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একদল প্রতিনিধি। থাকবেন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরাও।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এরপর তাকে দেওয়া হবে গার্ড অব অনার। পরে প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘হায়দরাবাদ হাউস’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সংলাপ করবেন। পরে তার সম্মানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেবেন। শেখ হাসিনার সফরকালে তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করসহ শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারাও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

সফরকালে প্রধানমন্ত্রী কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) আয়োজিত এক ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ সদস্যের উত্তরসূরিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ‘মুজিব স্কলারশিপ’ও দেবেন।

এর আগে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান সহযোগিতামূলক সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরবেন ৮ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে হঠাৎ ব্যায়াম শুরু করলেন মোদি (ভিডিও)

এ সফরে নতুন কী পাওয়া যাবে?

ডয়চে ভেলে বাংলার এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই সফরে ভারতের কূটনৈতিক মহল এবং সংবাদমাধ্যমে  বাংলাদেশের চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ার যে প্রবণতার কথা বলা হচ্ছে সেটি পরিষ্কার করা হবে বলে জানা গেছে। তবে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কথা হলেও তিস্তা নিয়ে কিছু হচ্ছে না। কুশিয়ারার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হতে পারে, ভারতে যৌথ নদী কমিশনের বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভারত বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়েছে।

এই সফরে যেসব বিষয় আলোচনায় আসবে তার মধ্যে আছে সামরিক সরঞ্জাম কেনা। এ নিয়ে ২০১৯ সালে চুক্তি হয় ভারতের সাথে। ভারত  ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। ওই ঋণের আওতায় ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বাংলাদেশ। গত জুলাইয়ে ভারতের সেনা প্রধান যখন ঢাকা সফর করেন তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে বিষয়টি ওঠে বলে জানা যায়।

মেরিটাইম সিকিউরিটির জন্য ভারত থেকে রাডার ক্রয় নিয়েও কথা হবে। উপ-আঞ্চলিক এনার্জি হাব গঠন নিয়ে কথা হবে। আর সেটা হলো বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানকে নিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এর নেতৃত্বে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে চায়। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা কানেকটিভিটি বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ।

এবার সফরের অর্থনেতিক বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি, সেপা (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট)। এই চুক্তি হলে ভারত ও বাংলাদেশের পণ্য দুই দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ এরইমধ্যে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে।  এর সঙ্গে বাংলাদেশ  এন্টি ডাম্পিং নীতি নিয়েও কথা বলবে।

এবারের সফরে বাংলাদেশ চাইছে যে দুই দেশের মধ্যে যে সর্বোচ্চ সম্পর্ক তা আরো একবার নির্বাচনের আগে প্রমাণ করা। আর সেজন্য বাংলাদেশের দিক দিয়ে সেপা চুক্তিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ভারতে যে একটি মনোভাব তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে তা দূর করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর ভারত গিয়ে সেখানকার কূটনীতিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন। দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এ আয়োজন করেছে। মোদির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ৬ সেপ্টেম্বর। দুই নেতার যৌথ ঘেষণায় সুসম্পর্কের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ফোকাস করা হবে বলে জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ