আইফোন ফিরিয়ে দেওয়া রিকশাচালককে পুরস্কৃত করলেন মেয়র

রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের হাতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন
রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের হাতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন  © সংগৃহীত

কিছুদিন আগে রাজধানীর গুলশান এলাকার ১০৩ নম্বর রোড দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন রিকশাচালক। রাস্তার পাশে দেখতে পেলেন একটি মোবাইল ফোন পড়ে আছে। আইফোনোর সর্বাধুনিক ম্যাক্সপ্রো মডেলের ফোনটিতে খুব বেশি চার্জ ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনটি বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারছিলেন রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম। এই অবস্থায় ফোনটি নিয়ে কি করবেন চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি।

কুড়িয়ে পাওয়া ফোনে কেউ কল দেয় কি না  অপেক্ষা শুরু করলেন তিনি। এমন সময়  চার্জ শেষ হয়ে ফোনটি বন্ধ হয়ে গেল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই ফোনের মালিককে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবেন এবং ফোনটি ফেরত দিয়ে দেবেন। কিন্তু চার্জ ফুরিয়ে ফোনটি তো বন্ধ। তাই আমিনুল ইসলাম গেলেন একটি মোবাইল সরঞ্জামের দোকানে, চাইলেন কুড়িয়ে পাওয়া মোবাইলের চার্জার। কিন্তু ফোনটির চার্জার পেলেন না। উপায় না পেয়ে আইফোনের মধ্যে থাকা সিম কার্ডটি খুলে নিজের ফোনে নিলেন।

এরপর  অপেক্ষা করতে থাকলেন কখন এই নম্বরে ফোন আসে। হঠাৎ একটি কল পেলেন তিনি। যিনি কল করেছেন তিনি ওই ফোনের মূল মালিককে চাইছিলেন। রিকশাচালক তখন অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে জানালেন তিনি এই ফোনটি রাস্তায় পেয়েছেন। মূল মালিককে এই নম্বরে ফোন করতে বললেন।

মূল মালিকের পক্ষ থেকে ফোন করে রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা হলো এবং একটি ঠিকানা দিয়ে ফোনটি নিয়ে সেখানে যেতে বলা হলো। ঠিকানা অনুযায়ী রিকশাচালক আইফোনের মূল মালিকের বাসায় গিয়ে ফোনটি পৌঁছে দেন। এতো দামি ফোন হাতে পেয়েও লোভ না করে রিকশাচালক সেটি ফেরত দেওয়ার এমন বিরল ঘটনা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম কানে আসে। যে কারণে রিকশাচালকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি গুলশান ডিএনসিসি নগরভবনে ডেকে পাঠান।

রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে নগর ভবনের সেমিনার রুমে একটি বৈঠক শেষে সেই রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের হাতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন। এসময় উপস্থিত সবাই কড়তালির মাধ্যমে দাঁড়িয়ে ওই রিকশাচালকের সততার প্রতি সম্মান জানান।

আরও পড়ুন: কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের কক্ষে থাকেন পুরুষ শিক্ষক, প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন

পুরস্কার দেওয়ার আগে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমিনুল যে সততা দেখিয়েছেন, তা একটি দৃষ্টান্ত। আমিনুলের সততাকে সম্মান জানাতে ও এই ধরনের কাজে অন্যদের উৎসাহিত করতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আমিনুল বলেন, মোবাইলটি (আইফোন) রিকশায় পেয়ে হাতে নিয়ে দেখি বন্ধ। মোবাইল বন্ধ থাকায় এর মালিককে ফেরত দেবো কীভাবে। খোলা থাকলে মালিক ফোন দিতে পারে। এই চিন্তা করে রিকশা রেখে মোবাইলটির চার্জার কিনতে যাই। দোকানে চার্জার কিনতে যেয়ে দেখি চার্জারের দাম ৭০০-৮০০ টাকা। দিনে আমার ইনকাম ৫০০-৬০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে চার্জার কীভাবে কিনবো?

‘চার্জারের দাম বেশি চাওয়ায় পরে বুদ্ধি করে মোবাইলটি থেকে সিম খুলে আমার নিজের মোবাইলে ঢুকালাম। এর একদিন পর রাত ১১টার দিকে ওই সিমে ফোন আসে। পরদিন বাড্ডা থানায় গিয়ে যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল সেই নম্বরসহ পুলিশের কাছে আইফোন দিয়ে আসি।’

মোবাইলটি অনেক দামি। আপনি বিক্রি না করে ফেরত দিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে রিকশাচালক বলেন, মোবাইল পাওয়ার পর আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যার মোবাইল তাকে ফেরত দিয়ে দেবো। মোবাইলটি ফেরত দিয়ে আমার নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে।


সর্বশেষ সংবাদ