প্রক্সি ও নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে যেভাবে ২০ বাড়ির মালিক মাহবুব
সরকারি চাকুরির প্রক্সি পরীক্ষা, বীর মুক্তিযোদ্ধদের ভুয়া আত্মীয় বানিয়ে কোটার সুবিধা নেওয়া ও নিয়োগ জালিয়াতির চক্রের মূল হোতা মাহবুবকে গত ৬ আগস্ট গ্রেফতার করেছে ময়মনসিংহ মডেল থানা পুলিশ। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও টাঙ্গাইলেও একাধিকবার প্রক্সি পরীক্ষা দিতে গিয়ে অন্তত ৮ বার ধরা পড়েছেন মাহবুব।
গ্রেফতারকৃত মাহবুবের বাড়ী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর শ্রীবরদী কলেজ সংলগ্ন। পেশায় মাহবুব প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষক। তবে বিভিন্ন সময় অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কারণে দীর্ঘদিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। কখনও মুচলেকা দিয়ে রেহাই পেয়েছেন আবার কখনও জেল হাজাত খেটে আগের পেশায় ফিরেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চারটি বিয়ে করেছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, একজন স্কুল শিক্ষক হয়েও এক সময়ে অভাবে থাকা এই মাহবুব এখন শ্রীবরদী শহরের কয়েক কোটি টাকার জমির মালিক। তার এই হঠাৎ পরিবর্তন চোখ এড়ায়নি কারোর। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাহবুবের অন্তত ২০টি বাড়ি আছে। যে অঞ্চলের চাকরির আসন বেশি বা খালি থাকে সেই অঞ্চলের নিজের বাড়ির ঠিকানা দেখিয়ে আইডি বানিয়ে পরীক্ষার্থীদের ওই ঠিকানা থেকে আবেদন করানো হয়।
এছাড়া কন্ট্রাক করা চাকরি প্রার্থীদের সাথে অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অফিসের কাউকে ম্যানেজ করে লিখিত পরীক্ষায় চাকরি প্রার্থীর প্রক্সি দেয়া মেধাবি শিক্ষার্থীদের আসন এক সাথে বসানো হয়। ডামি প্রার্থী ও আসল প্রার্থীদের সমন্বয় করতে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একজনের প্রবেশ পত্রে নিজের ছবি লাগিয়ে পরিক্ষা দেন তিনি।
জানা যায, সারা দেশে এই চক্রের শক্তিশালি নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাদের সাথে জড়িত রয়েছে সরকারি বেশ কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারি, সরকার দলীয় রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি। চক্রের কেউ বিপদে পড়লে উপর মহলের অদৃশ্য ইশারায় ওই বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যায় তারা।
আরও পড়ুন: জাবিতে প্রক্সি দিতে এসে আটক সেই যুবকের ৭ দিনের কারাদণ্ড।
এছাড়া এই সিন্ডেকেট চক্রের অন্যতম সদস্য মনিরুজ্জামান মনির অডিট কর্মকর্তা (এফপিও)। মেধাবি শিক্ষার্থী জোগাড় করে পরীক্ষা হল পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার কাজটি করেন তিনি। মাহবুব এবং মনিরের পরিবারে অন্তত ২৫ জন সরকারি চাকরিতে রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগীরা জানান, পরীক্ষা হলে কোনো সমস্যা হলে প্রার্থী, প্রক্সি প্রার্থীকে ওই চক্রের প্রভাবশালীরা পরীক্ষা হল থেকে উঠিয়ে নিয়ে তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে রক্ষা করে।
তবে এ ব্যাপারে মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিথ্যে ও বানোয়াট বলে দাবি করেন তিনি।
গত ৬ আগষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারি স্টেশন মাস্টার নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার সময় ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্র থেকে মাহবুবকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন মাহবুব। মামলার অপর অভিযুক্ত চাকরি প্রার্থী আহসান উল্লাহর (রোল নং ২৬০৮৯৪২৭) পরীক্ষায় প্রক্সি দিচ্ছিলেন মাহবুব। মামলার পরই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন মূল পরীক্ষার্থী আহসান উল্লাহ।
ময়মনসিংহ মডেল কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ কামাল আকন্দ বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে মাহবুবকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে মাহবুবকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই চক্রের সাথে আর কে কে জড়িত তা জানা যাবে।