অসুস্থ হয়েও হয়রানির শিকার, নিস্তার চান মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:২০ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১০:২২ PM
বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ তিনি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অসুস্থ অবস্থায় নিয়মিত ক্লাস নেন। এরপরও কটু কথার শিকার হতে হয় তাকে। মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। চিকিৎসকরা তাকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করলেও সহকর্মীদের কটাক্ষ শুনে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
বলা হচ্ছে দিনাজপুর নুরজাহান কামিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. রুবেল আলীর কথা। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে এই মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিনাজপুরের রানীপুর নুরুল হুদা আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। তবে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিজ বাড়ির কাছের প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ পাওয়ায় তিনি সেখানে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই নানা ভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।
নিজের সাথে হওয়া মানসিক অত্যাচার সইতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘‘আসসালামু আলাইকুম, আপনারা যারা আমার আইডিতে যুক্ত আছেন তারা জানেন আমি গত ডিসেম্বর থেকে Chronic Pancreatitis রোগে ভুগছি। Chronic pancreatitis রোগের অন্যতম বড় সমস্যা মানসিক স্ট্রেচ সহ্য করতে না পারা। আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার পরও প্রায় প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতনের শিকার। গত দুই রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। এমতাবস্থায় যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্র যেন এর সঠিক তদন্ত করে বিচার করে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। Law is equal to all. সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ যে, যেকোন সময় যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে। তাই ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়ে রাখলাম। আবারও সবার কাছে দোয়া চাই।’’
রুবেল আলীর এমন স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, আমাকে প্রতিদিন মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়। আমার দায়িত্ব কি সেটা সম্পর্কে আমার জ্ঞান রয়েছে এবং সেটা পালন করি। এই মাদ্রাসায় যুক্ত হওয়ার আগে আমি আরেকটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকরি করেছি। সেখানে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই আমাকে শুনতে হচ্ছে যে, আমার নামে অভিযোগের পাহাড়। তবে অভিযোগটা কি সেটা কেউ বলছে না।
তিনি বলেন, আমি আমার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যার বলেন, সিনিয়র শিক্ষকরা নাকি বলে; রুবেল তো বসে আছে, উনাকে প্রক্সি ক্লাসে পাঠান। এটা কি কোন অভিযোগ হতে পারে? প্রায়ই এসব বলে আমাকে মানসিক টর্চার করা হয়। আমি ফাজিলের সৃষ্ট পদে জয়েন করেছি, ফাজিলের ক্লাস নিয়ে থাকি, আলিমের ক্লাস নিয়ে থাকি এমনকি মাধ্যমিক শাখার দশম শ্রেনির ৫দিন ক্লাস নিয়ে থাকি, আগে নবম শ্রেণির ক্লাসও নিতাম। কোন ইংরেজি শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে সেই প্রক্সি ক্লাসও নিয়ে থাকি। আমি সময় মতো যাওয়ার চেষ্টা করি, আমার ক্লাস ভালোভাবে নেওয়ার চেষ্টা করি। তবুও কেন প্রতিদিন মানসিক নির্যাতন করা হয়?
রুবেল আলী আরও বলেন, আমি যেই টাইমে যাই সেটাই শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় উল্লেখ করি। সৎভাবে জীবন পরিচালনা করা কি অন্যায়? প্রতিষ্ঠান ছুটি হয় ১টা ২০ মিনিটে। যোহরের নামাজ শেষে অনেকেই চলে যায়, আমি গেলে দোষ কোথায়? সেটা নিয়ে আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়। তবুও কিছু বলি না, নীরবে সহ্য করি। সিনিয়র জুনিয়র বলে প্রতিদিন মানসিক টর্চার করা হয় আমাকে। ছুটি নিতে গেলে ছুটি দেওয়া হয় না। আমি মোট ৫টি ছুটি নিয়েছি, মেডিকেল ছুটি নিয়েছি সাতদিন। অথচ এরজন্য অনেক কথা শুনানো হয়, এগুলো মানসিক টর্চারের মধ্যে পরে কি না? এই টর্চার শেষ কবে হবে তা আমি জানি না। তাই নিরুপায় হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি।
রুবেল আলী জানান, আমাদের মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. আবু রাশেদ মর্তুজাই মূলত আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। তিনি মূলত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। তার কাছে পড়া শিক্ষার্থীদের সাজেশন না দেওয়ায় তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত। তিনি আকার ইঙ্গিতে নানাভাবে আমাকে বিষয়টি বুঝিয়েছেন। তবে আমি তার সেই আকার-ইঙ্গিত না বোঝায় আমাকে প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন করছেন। আমি এই নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই।
তবে রুবেল আলীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মর্তুজা। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না। তিনি এ প্রতিবেদককে মাদ্রাসায় গিয়ে বক্তব্য নিয়ে আসতে বলেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নুরজাহান কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মর্তুজা এবং রুবেল আলীর মধ্যে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তবে আমরা সেটি মীমাংস করে দিয়েছিলাম। এরপরও যদি কেউ আপনাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।
ছুটি না দেওয়া এবং মানসিক নির্যাতন করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, রুবেল আলী এখন শিক্ষানবীস হিসেবে আছেন। সেজন্য তাকে ছুটি দেওয়া হয় না। তবে তিনি মেডিকেল ছুটি চেয়েছিলেন। সেটি আমরা দিয়েছি।