কেন ভাঙছে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত?

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভেঙে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টসহ একাধিক স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে চার কিলোমিটার সৈকত এবং এর বালুচরের ঝাউগাছ ও দোকানপাট বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেন।

ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বিভিন্ন এলাকার বালু সরে গেছে। তীব্র ভাঙনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি ও ঝাউ বাগান।

লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসন নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ পর্যন্ত চলে এসেছে ভাঙন। কিছু কিছু জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে কোনও কাজ হচ্ছে না। ইতোমধ্যে লাবণী পয়েন্টের বেশ কয়েকটি জিওব্যাগ সমুদ্রে চলে গেছে। ওই এলাকার ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্কও সমুদ্রে চলে গেছে।

গত ৫০-৬০ বছরে বালিয়াড়িতে এমন ভাঙনের নজির নেই জানিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, পাউবোর অপরিকল্পিত জিও টিউব ও জিও ব্যাগভর্তি বালুর বাঁধের কারণে পুরো সৈকতের এমন ভাঙনদশা। এখানে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের নামে চলছে সরকারি টাকার লুটপাট।

কিন্তু কেন ভাঙছে সমুদ্রসৈকত, ভাঙন থেকে উত্তরণের উপায় কী—এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটন ও স্থানীয়রা। তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন সমুদ্রবিজ্ঞানীরা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা ইনস্টিটিউটের (ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস) সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, আসলে অনেকগুলো কারণে সৈকতে ভাঙন হতে পারে। বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নিম্নচাপ তৈরি হয়। আর আগের তুলনায় নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে বেশি। এর ফলে উপকূলে যে ঢেউ আছড়ে পড়ছে, তা অনেক শক্তিশালী হয়। এখন ঢেউয়ের তীব্রতা ও শক্তি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন ঢেউগুলো অনেক শক্তি নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ছে। এতে উপকূলে, বিশেষ করে, সৈকত এলাকায় যেখানে পানি খেলা করে সেখানে ঢেউয়ের তোড়ে বালু সরে যাচ্ছে।

এ ছাড়া মানবঘটিত কারণও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের উপকূলে পলি আর বালু জমা হওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে। শীতের মৌসুমে সৈকতে বালু জমা হয়। বর্ষা মৌসুমে সাগর যখন উত্তাল হয় তখন বালু সরে যায়। এখন আমার ধারণা, এই সাম্যাবস্থাকে আমরা ব্যাহত করেছি। হয়তো কোনো একটি জায়গায় আমরা বালু আটকে ফেলছি। যে কারণে প্রাকৃতিকভাবে যে বালু জমা হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘সৈকত ভাঙনরোধে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত রক্ষায় পরিবেশবিজ্ঞানী, সমুদ্রবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সমন্বিতভাবে শক্তিশালী ও টেকসই উপায় বের করতে হবে। আমি বলবো, কক্সবাজারের উপকূল রক্ষায় সমুদ্রের স্রোত ও ঢেউয়ের প্রকৃতি ও ভূগঠনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে জৈব-প্রকৌশল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। একইসঙ্গে সমুদ্রপাড়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে পরিবর্তন আনতে হবে। সৈকতকে প্রাকৃতিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সৈকত সুরক্ষায় পর্যটন ও পর্যটকদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে। তা না হলে আগামীতে পর্যটন শিল্প থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ