বাবা-মা ও স্বজন হারিয়ে ট্রমায় ভুগছেন নবদম্পতি
রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় নববধূ রিয়া মনি হারিয়েছেন তার মা ফাহিমা বেগমকে। আর বর হৃদয় হারিয়েছেন বাবা রুবেল হাসানকে। প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তবে নবদম্পতি অক্ষত আছেন। জরুরি বিভাগে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু দুজনেই বাবা-মা ও স্বজনদের হারিয়ে ট্রমায় ভুগছেন।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের জসীম উদ্দীন আড়ংয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।ওই প্রাইভেটকারে ছিলেন সাতজন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রুবেল (৬০), ফাহিমা (৪০), ঝরনা (২৮), জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
এ দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারে থাকা দম্পতি হৃদয় ও রিয়া মনিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে মেয়ের বাড়িতে ফেরার পথে উত্তরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মমতার শিকার হয় এই পরিবারটি। এ সময় গাড়িতে থাকা নববধূ রিয়ার খালা ঝর্নাসহ তার ২ সন্তানও মারা যায়। পরিবারের সদস্যরা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: আধাঘণ্টা কান্নার পর মায়ের কোলে মৃত্যু হয় শিশু জাকারিয়ার
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. এন আলম মাসুদ জানান, শুধু হৃদয়ের ডান পায়ে সামান্য আঘাত রয়েছে। এ ছাড়া দুজনেই অক্ষত আছেন। তাদের শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। তবে মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম তাদের রিলিজ দিব। কিন্তু পরে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী এবং ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম তাদের দেখতে এসেছিলেন। তারা ট্রমা কাটিয়ে ওঠার জন্য আরও কিছু সময় হাসপাতালে রাখতে বলেছেন। দুজনকে এখন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, হৃদয় ও রিয়া মনিকে ঘিরে রয়েছেন স্বজনেরা। তারা বেশিরভাগ সময়ই অন্যমনস্ক থাকছেন। ক্ষণে ক্ষণে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। হৃদয়ের ভাই ও স্বজনেরা মিলে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
স্বামী হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে হৃদয়ের মা আমেনা বেগম। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, হৃদয়কে গত শনিবার বিয়ে দিলাম। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করলাম। আজও বৌভাতের অনুষ্ঠানে অনেকের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কেটেছে। কিন্তু এখন আমি আমার স্বামী রুবেল হাসানকে হারালাম। বউসহ ছেলেও হাসপাতালে ভর্তি।
তিনি বলেন, পরিবার পুরো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।