রুপালি গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন আজ
ব্যান্ডতারকা ও গিটার জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর ৬০তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। দেশসেরা গিটারিস্টও ছিলেন তিনি। শ্রোতাদের হৃদয় জুড়ে এখনো তার বিচরন নক্ষত্রের আলোর মতই উজ্জ্বল৷ ফেলে যাওয়া রুপালি গিটারের কাব্যময়তার প্রতীক আইয়ুব বাচ্চু।
১৯৬২সালের ১৬ই আগষ্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা রক সংগীতের এই কিংবদন্তি শিল্পী। তার বাবা ইশহাক চোধুরী এবং মা নুরজাহান বেগম। তাদের পরিবার ছিল একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার। তার মতে, তাদের পরিবারে সবাই অতি ধার্মিক ছিলেন এবং সংগীত নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়াটা কেউ গ্রহণ করেননি। ১৯৭৩ সালে আইয়ুব বাচ্চুর বাবা তাকে তার ১১তম জন্মদিনে একটি গিটার উপহার দেন। তার কৈশর জীবনের শুরুর দিকে সে বিভিন্ন ব্রিটিশ এবং আমেরিকান রক ব্যান্ডের গান শোনা শুরু করেন।
ছোটবেলা থেকেই বোহেমিয়ান আইয়ুব বাচ্চু, স্বভাবে ছিলেন বাউন্ডুলে। মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। একটা সময় বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা হয়ে উঠলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে অগুনিত দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তার সঙ্গে। তার গিটারের ঝংকারে বিদ্যুৎ বয়ে যেত তরুণ-তরুণীদের শিরা-উপশিরায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘বস’। কারও কাছে ‘স্যার’। আর সবার কাছে সংক্ষেপে ‘এবি’।
১৯৮০ সালে আইয়ুব বাচ্চু ও কুমার বিশ্বজিৎ একসঙ্গে দেশের জনপ্রিয় এবং পুরনো ব্যান্ডদল 'সোলস'-এ যোগ দেন। তার প্রথম গাওয়া গান হারানো বিকেলের গল্প। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাচ্চু সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে থাকতে পেরেছিলেন। কারণ ওই বছরই দলটি ভেঙে যায়। পরের বছর তিনি লাভ রানস ব্লাইন্ড অর্থাৎ এলআরবি ব্যান্ডদল গঠন করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই দলটির মেইন ভোকাল ছিলেন।
আরও পড়ুন: খায়রুনকে লাথি মেরে সেই রাতে বাইরে চলে যান স্বামী মামুন
তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম রক্তগোলাপ। তবে তার সফলতা শুরু হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ময়নার মাধ্যমে। এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি ১৯৯২ সালে এলআরবি ১ এবং এলআরবি ২, বাংলাদেশের প্রথম ডবল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। তাদের তৃতীয় অ্যালবাম সুখ (১৯৯৩) ছিল অন্যতম ব্যবসা সফল অ্যালবাম।
৪০ বছরের গায়কী জীবনে ১২টি ব্যান্ড, ১৬টি একক ও বহু মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর। এসবের পাশাপাশি গান গেয়েছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও। তার অসংখ্য দর্শকপ্রিয় গানের তালিকায় সুখ, একদিন ঘুম ভাঙা শহরে' ফেরারি মন এই রুপালি গিটার হাসতে দেখো, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, চলো বদলে যাই সহ আছে বহু নাম।
আইয়ুব বাচ্চু মূলত রক ঘরানার গান করতেন। শ্রোতাদের কাছে ইংরেজি গান, হার্ড রক, ব্লুজ, অলটারনেটিভ রক নিয়ে গেছেন শুরু থেকে। ব্যান্ড সংগীতের প্রতি তারুণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ছিলেন গিটারের জাদুকর। গিটারের টুংটাং শব্দই যেন তার সমস্ত দেহ-মন-সত্তাজুড়ে বিরাজমান ছিল। আইয়ুব বাচ্চু সব সময় বলতেন, গিটার আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। গিটারের জন্যই ঘর ছেড়েছিল। রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন তিনি, কিন্তু কিংবদন্তি নেই তারকা সংগীতের জগতে হয়ে আছেন ধ্রুবতারা।
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং গায়ক। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর আইয়ুব বাচ্চু হঠাৎ করেই তার অগণিত ভক্ত-শ্রোতাকে কাদিয়ে চিরতরে চলে যান না ফেরার দেশে।