০৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০৯

ডলার কারসাজি: ৬ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংক   © ফাইল ফটো

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক।

দেশি পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ও সাউথইস্ট ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সোমবার রাতে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘ট্রেজারি অপারেশনে অতিরিক্ত মুনাফা করায় পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় জরুরিভিত্তিতে ওই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ করতে সোমবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

এদিকে কিছুদিন ‘স্থির’ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।

এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।

অন্যদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে সোমবার ডলারের দর উঠেছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।

ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।

অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা। আর সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে টাকা-ডলার বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। সোমবার ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৫ টাকা। আর এটাই আজকের আন্তব্যাংক দর।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১২ শতাংশ।

খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।

আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৭ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।