যেভাবে ঘটেছে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা

ট্রেন-বাস সংঘর্ষ
ট্রেন-বাস সংঘর্ষ  © সংগৃহীত

কিছুদিন পরই এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা। তার আগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল কোচিং সেন্টারটি। শেষও হয়েছিল ঘুরাঘুরি। দেখা হয়েছিল ঝরনা-পাহাড়। কিন্তু ভ্রমণ শেষে আর বাড়ি ফেরা হলো না। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জনই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬ জন। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

কিন্তু কীভাবে ঘটনা এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা? ঘটনায় দায়ী কে-কারা? একাধিক সূত্রের দাবি, উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার উত্তরে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো লাইনম্যান ছিলেন না। সড়কের ওপর লেভেল ক্রসিংয়ে ছিল না সিগন্যাল। এ কারণে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই রেললাইনের ওপর উঠে যায় মাইক্রোবাসটি।

ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ট্রেনটিতে যাত্রী হিসেবে ছিলেন মো. কলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বৃষ্টি পড়ছিল। মাইক্রোবাসটিও মহাসড়কের দিকে যাচ্ছিল। তার দেখামতে, সড়কের লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। লাইনম্যানও ছিলেন না। ফলে কোনো বাধা ছাড়াই মাইক্রোবাসটি রেললাইনের ওপর উঠে যায়। তখন মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা লাগে। 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী জানান, মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি বড়তাকিয়া ক্রস করার সময় লাইনে ওঠে যায় মাইক্রোবাস। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি অনেক দূর চলে যায়। তার বক্তব্য, লেভেলক্রসিংয়ের বাঁশ ঠেলে মাইক্রোবাস লাইনে উঠলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

রেলক্রসিংটির সামনে কথা হয় রেল পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জি এম) জাহাঙ্গীর হোসেন সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রসিং এলাকার এক দোকানি জানিয়েছেন দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান সাদ্দাম দোকানে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। এ ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা এটা যাচাই করার জন্য ইতোমধ্যে তাকে আটক করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গেটম্যান সাদ্দাম জানিয়েছেন ট্রেনের আপ লাইন আসার পর তিনি গেট নামান, এর কিছুক্ষণ পরেই চলে আসে ডাউন লাইন। মাইক্রোবাসের চালক নিজে গিয়ে গেট তুলে দিয়ে লাইনে প্রবেশ করেন। তিনি ভেবেছিলেন আপ লাইন এসেছে, ডাউন লাইন হয়তো আর আসবে না। এটা ভেবে লাইনে ঢোকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।  

স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, মাইক্রোবাস চালকের অবহেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। নামানো গেট তুলে তিনি প্রবেশ করেছেন। আবার অন্যরা বলছেন, ঘটনার সময় গেটম্যান ছিলেন না। থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না।  সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, গেটম্যান ছিলেন না, থাকলে গেট নামানো থাকতো।  

মাইক্রোবাসে থাকাদের মধ্যে জিসান, সজিব, রাকিব ও রিদওয়ান কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। ৫ জন জোগিরহাট জিয়াউর রহমান কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ৬ জন নজুমিয়া হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাকি ২ চালক ও হেলপার। মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে।

সেই ট্রেনে মৃত্যু আরেকজনের
এদিকে মহানগর প্রভাতী নামে ওই ট্রেনে কাটা পড়ে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার পর   বিকেলে পাহাড়তলী পুলিশ বিট রেলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মহানগর প্রভাতী ট্রেনে একজন আত্মহত্যা করেছেন এমন সংবাদ রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে পেয়েছি। আমরা তার বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।  এর আগে মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি মীরসরাই ক্রস করার সময় একটি মাইক্রোবাসকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হয়। 


সর্বশেষ সংবাদ