ডাবে চুমুক দিলেই ১১০ টাকা!
‘এইটা এক নম্বর ডাব। এক্কেবারে কচি ৷ একদাম ১১০টাকা। ভরপুর পানি হইবো। ওইটা দুই নম্বর ডাব। দাম ৯০ টাকা। পানি কম হইবো। আরেকটা আছে তিন নম্বর ডাব। ওইটাতে পানি আরও কম। দাম হইলো ৮০ টাকা। দামাদামি হইবোনা। একদাম।’ এভাবেই বলছিলেন রাজধানীর বেইলী রোডের ডাব বিক্রেতা পারভেজ হোসেন। তার মতে সবকিছুর ঊর্ধ্বগতির বাজারে ডাবের দাম কম থাকার কোনো যুক্তি নেই। তাছাড়া আমদানি কম থাকায় দামও তুলনামূলক বেশি।
ওই রোডের ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম ও সেলিম ভূঁইয়াও একই কথা বললেন। শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর বেইলী রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে ও আশপাশের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পরে। তবে ডাবের দাম বেশি থাকলেও ক্রেতাও কম নয়। ভ্যাপসা গরমে আরাম পেতে এবং স্বস্তির জন্য দাম বেশি থাকলেও বাধ্য হয়েই ডাব কিনে পান করছেন ক্রেতারা।
তারা বলছেন, ঢাকায় শীতকাল ছাড়া অন্য সময় নানা অজুহাতে উচ্চ মূল্যে ডাব বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা। অথচ গ্রামের ত্রিশ-চল্লিশ টাকায় কেনা ডাব ঢাকায় সর্বোচ্চ আশি নব্বই টাকা দাম হওয়ার কথা। বাস্তবে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
আব্দুল মুনিম নামের এক ক্রেতা বলেন, বাচ্চাকে সকালে কোচিং ক্লাসে নিয়ে এসেছিলাম। বের হওয়ার পর ডাব কিনে দিলাম। দাম দিতে গিয়েই জানলাম ১২০টাকা। আজকে শুক্রবার চাহিদা বেশি থাকায় দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। অন্য সময় ৮০ টাকা থেকে ৯০টাকায় পাওয়া যায়। এসব দেখার কেউ নেই।
সামিরা আফরোজ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ঢাকায় এলাকা ভেদে খুচরা বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দাম হাঁকেন। বাচ্চাদের স্কুল কলেজের আশেপাশে যেসব ডাব বিক্রেতারা রয়েছেন, তারা ইচ্ছে করেই অনেক বেশি দাম চেয়ে থাকেন। কারণ তারা জানেন যে, অভিভাবকেরা দাম বেশি চাইলেও বাচ্চাদের কিনে খাওয়াবেন। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
আরো পড়ুন: মন খারাপের কারণ চারটি হরমোন, ভারসাম্য রাখবেন যে ১১ উপায়ে
মূলত তৃষ্ণা মেটাতে চাইলে ডাবে চুমুক দিতে চান না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। পুষ্টি ও ঔষধি গুণের কারণে প্রায় সারাবছরই ডাবের চাহিদা থাকে। শীতে কিছুটা কম দামে ডাব পাওয়া গেলেও গরমের শুরু থেকেই খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ডাব কিনতে হয়। ডাবের পানিতে থাকে খনিজ লবণ যা মানুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্যপ্রাণ। শরীরের রোগ দূর করতেও এর জুড়ি নেই। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ডাবের পানিতে দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
তা ছাড়া ডায়ারিয়া হলে মানবদেহে ইলেকট্রোলাইট কমে যাওয়ার ফলে মানুুষ যখন দুর্বল হয়ে পড়েন, তখন ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট ব্যালানসড হয় এবং শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে। তা ছাড়া ডাবের পানিতে কিনেটিন থাকে, যা স্নায়ুসংক্রান্ত রোগেও বেশ উপকারী।
ডাবের পানি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে। কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করা, ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস বা অ্যাসিডিটি, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও ইউরোলিথিয়েসিস প্রতিরোধ করে ডাবের পানি। তাছাড়া বেশ কিছু এন্টিসেপটিক গুণও রয়েছে। ফলে কাটা-ছেড়া জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখের ক্ষত যেমন—ব্রণ, মেছতা ও ফক্সের ক্ষত ডাবের পানি দিয়ে ধৌত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।