২৬ জুলাই ২০২২, ১১:৫৪

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে আলী রীয়াজের বাবা-মায়ের নামে ট্রাস্ট ফান্ড

আলী রীয়াজ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ  © ফাইল ছবি
বাংলাদেশী মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রীয়াজ তার মৃত বাবা-মায়ের নামে দু‘টি শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছেন। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ তাদের নামে এই ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের ব্যবস্থা করেছে। আলী রীয়াজ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক একাউন্টে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
 
ফেসবুক  পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এই দফার স্বল্প সময়ের সফরে বেশ কিছু কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এর কিছু দায়িত্বের অংশ হিসেবে, কিছু ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে। কিন্ত এই সফরের সময়ে আমার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণের সুযোগ হয়েছে। সেজন্যে আমি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার মা এবং বাবার নামে দুটি শিক্ষা বৃত্তি চালু করার উদ্যোগে তারা সম্মতি দিয়েছেন, সামান্য অর্থ স্বত্বেও তারা দুটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের ব্যবস্থা করেছেন।
 
আমার মা বিলকিস আরা স্বশিক্ষিত ছিলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ তার হয়নি, কিন্ত আমাদের ভাইবোনদের সকলের শিক্ষার পথকে তিনি প্রতিদিন প্রশস্ত করেছেন – তার কাজ দিয়ে, অনুপ্রেরণা দিয়ে। প্রতিদিনের সংবাদপত্র ও বই তার সঙ্গী ছিলো। ১৯৬৬ সালে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সৈয়দা শামসে আরা হোসেন আমাদের বাসার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতেন, সেই সময়েও মা’কে দেখেছি কলেজ বিষয়ে তার উৎসাহ। আমার মা মারা যান ১৯৯৮ সালে।
 
আমার পিতা মহব্বত আলী সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন, ভূমি জরিপের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে ১৯৫০-এর দশকে তিনি অবসর নেন। বৃটিশ ভারতে তাঁর কর্মজীবনের অধিকাংশ কেটেছে – সেই সুত্রে তিনি পুর্ববঙ্গ, আসাম এবং পশ্চিম বাংলায় বিভিন্ন জায়গায় কাটিয়েছেন। কিন্ত ১৯৪৭ সালে তিনি পাকিস্তানে আসারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী আমার জন্মস্থান হয়েছে, আমাদের স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে। আমার বাবা মারা যান ১৯৮৬ সালে।
 
আমাদের সকলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠাই শুধু নয়, আমরা ভাই বোনদের অনেকেই যে শিক্ষকতা এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পেশায় যুক্ত হয়েছি তার কারন আমার মা-বাবার পক্ষপাত। শিক্ষা এবং পেশা নির্বাচনে আমার বাবা আমাদের কিছুই বলেননি। এই স্বাধীনতা আমাদের সবাইকে, নিশ্চিতভাবে আমাকে, যে এই জীবন বেছে নিতে সহায়তা করেছে তা অনস্বীকার্য। তা স্বত্বেও তাদের জীবদ্দশায় আমি অবাধ্যই ছিলাম, ১৯৭৯ সালে আমার প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থের উৎসর্গ পত্রে লিখেছিলাম ‘চির অবাধ্য সন্তানের শ্রদ্ধাঞ্জলি’।
 
সব পিতামাতাই তাদের সন্তানের জন্যে বহুবিধ ধরণের কষ্ট স্বীকার করেন, উদ্বেগে সময় কাটান, শঙ্কার মধ্যে দিনযাপন করেন। পেছনে তাকিয়ে মাঝে মাঝে মনে হ্য় তরুণ জীবনে রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে, লেখালেখির জীবনের কারণে, পরিকল্পনাহীন জীবন যাপনের কারনে, আচরণের মধ্য দিয়ে নিশ্চিতভাবেই কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে তাদের অনেক উদ্বেগের কারণ হয়েছি। তাদের আশাহত করেছি কিনা জানিনা, কিন্ত আমার দায়িত্ব আমি যে পালন করিনি সেটা অনুভব করি। আমার মা এবং বাবার নামে চালু করা এই বৃত্তি দুটি যদি দু’জন শিক্ষার্থীর জীবনেও সামান্য অবদান রাখে তবে মনে হবে তারা আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছিলেন – তার কিছুটা আমাদের পরিবারের বাইরে আলো ছড়াল।’