ডলারেও মিলবে না জ্বালানি, বাড়বে তেলের দাম
ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে জ্বালানি আমদানি। আগামীতে ডলারেও মিলবে না এ অপরিহার্য উপাদান। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাস বিক্রেতাদের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যাচ্ছে।
সরকারিভাবে তেল-গ্যাস আমদানির জন্য যাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়ে আছে তাদের অনেকে জানিয়ে দিচ্ছে, আগামীতে তারা আর জ্বালানি দিতে পারবে না।
তাদের ভাণ্ডারে পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উন্নত দেশগুলো আগামী ৫০ বছরের মজুত গড়ে তুলেছে। মজুতের পরও তাদের অর্ডার থামছে না। যার কারণে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো টাকা দিয়েও জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না।
এদিকে দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গ্যাসের মজুতও। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এতটাই বেড়েছে যে, সেখান থেকেও এখন আর গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না।
স্পট মার্কেট থেকে যে এলএনজি আগে ক্রয় করা হতো ইউনিটপ্রতি (এমএমবিটিইউ) ২৫ ডলারে তা বেড়ে হয়েছে অন্য সব চার্জ মিলিয়ে ৫০ ডলার।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে সড়কে প্রাণ গেল রাবি শিক্ষার্থীর
সিলেট গ্যাসফিল্ডস লিমিটেডের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র কৈলাসটিলা থেকে ২০১৬ সালে প্রতিদিন প্রায় ৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেটা নেমে এসেছে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুটে।
এছাড়া ২০টি গ্যাসক্ষেত্রের বেশিরভাগ থেকেই আগের তুলনায় কম গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে, যার কারণে গ্যাসভিত্তিক প্রায় ৩ হাজার ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে আছে।
এর প্রভাবে দেশব্যাপী চলছে চরম লোডশেডিং। মঙ্গলবারও সারা দেশে ৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। এদিন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ২শ মেগাওয়াটের মতো। সেখানে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট।
বিশেষজ্ঞ এবং পিডিবি সূত্র বলছে, সহসা কাটছে না এই সংকট। কারণ দিনে অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি কম সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। তাই সহসা লোডশেডিং থামবে বলে মনে করছেন না তারা।
দেশের বার্ষিক গ্যাস ব্যবহার প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রের মোট প্রামাণিক মজুতের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট, যা থেকে ইতোমধ্যে ২০ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকার নতুন কূপ অনুসন্ধানে বিনিয়োগের চেয়ে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সংকট কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছে সরকার। এটি দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে সেক্টরের ওপর অস্বাভাবিকভাবে জেঁকে বসেছে ভ্যাট ও শুল্ক। আগে এক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করা হতো ২৫০ ডলারে।
এখন প্রতি টনে শুধু শুল্কই দিতে হচ্ছে ২৩০ থেকে ৩শ ডলার। একই অবস্থা ডিজেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজিতেও। পরিস্থিতি সামলাতে জ্বালানি বিভাগ ভোজ্যতেলের মতো ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং এলএনজি থেকে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যথা ভয়াবহ ক্রাইসিসের দিকে যাবে দেশ। বন্ধ হয়ে যাবে কলকারখানার চাকা। এখন মজুত না বাড়ালে আগামীতে টাকা দিয়েও মিলবে না এই সম্পদ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকার জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা শুরু করেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
আগে যে ফার্নেস অয়েল টনপ্রতি ২৫০ ডলারে আমদানি করা হতো। এখন পড়ছে ৭০০ থেকে ১০০০ ডলার। আগে ২৫০ ডলারের ওপর ৩৪ শতাংশ ডিউটি দিতে হতো।
এখন পুরো ১০০০ ডলারের ওপর ডিউটি দাঁড়াচ্ছে ২৩০ থেকে ৩শ ডলার, যা প্রায় আগের আমদানি মূল্যের সমান। জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে তার চেইন ইফেক্ট অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়।