মামলা তুলে না নেয়ায় শিক্ষকদের পেটাল ছাত্রলীগ, অবরুদ্ধ অধ্যক্ষ

২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করার সময়
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করার সময়  © ফাইল ছবি

কলেজ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ করায় শিক্ষকদের লাঞ্চিত করাসহ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারি কলেজে এই ঘটনা ঘটে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা রকেটের মাধ্যমে নেওয়া এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কথিত টর্চার সেল বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল বুধবার শিক্ষকদের মারধর করা হয়। একই সাথে কলেজের অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহম্মেদকে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। শিক্ষকদের নিরাপত্তা এবং ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যক্ষ।

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, থানায় লিখিত অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার আবারও অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক বলেও জানান তারা।

তবে শিক্ষকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ফরম পূরণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার প্রতিবাদ করায় শিক্ষকরা তাদের লাঞ্চিত করেছেন। এই ঘটনায় তারা কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন। কোনো শিক্ষককে মারধর করা হয়নি।

আরও পড়ুন: শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, কলেজ ক্যাম্পাসে বেশ কিছুদিন ধরে দুর্বৃত্তরা একটি রুম দখল করে রেখেছিল। এটা ছিল তাদের অঘোষিত টর্চার সেল। কলেজের অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ টর্চার সেলটি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল ওই পক্ষ। এর জের ধরেই তুচ্ছ ঘটনায় তারা শিক্ষকদের লাঞ্চিত করে ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহম্মেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির রহমানের নেতৃত্বে সীমান্ত, রিভান, মুরাদ সহ বেশ কিছু দুর্বৃত্ত কলেজে ঢুকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে। আমাকে সকাল থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এ ঘটনায় উক্ত কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনকে লাঞ্ছিত করা হয়।  

তিনি আরও বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তরা মিছিল অব্যাহত রেখেছে। তারা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

এ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী সীমান্তকে ফোন দেওয়া হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে ফরম পূরণের অতিরিক্ত অর্থ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে। তবে ঘটনাস্থলে আমাদের ফোর্স রয়েছে।

কোনো শিক্ষককে মারধর করা হয়নি জানিয়ে ওসি আরও বলেন, আমি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহম্মেদকে অবরুদ্ধ করেছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ