দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব

নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের সন্তানরা তাল মেলাতে পারছে না স্কুল-কলেজে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূলবৃদ্ধির সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো তাল মেলাতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে অনেকে সংসারের খরচ কমিয়ে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার তাদের ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট টিউশন ও কোচিংয়ের পড়াশোনাও বন্ধ করে দিচ্ছেন।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার মুদ্রাক্ষরিক মো. হেদায়েত উল্লাহ। আগামী বছর তার ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। কিন্তু তিনি তার পরিবারের খরচ কমাতে আগামী মাস থেকে ছেলেকে কোচিংয়ে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন।

হেদায়েত উল্লাহ জানান, আগে সকাল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত চাকরির আবেদন, স্ট্যাম্প বিক্রি, নোটারি করাসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে তাঁর আয় কমতে থাকে। আমি সারাদিনে ৩০০ টাকাও আয় করতে পারছি না।

হেদায়েত উল্লাহ কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রাজধানীর ফার্মগেটে ৩১ বছর ধরে মুদ্রাক্ষরিকের কাজ করছেন। ১৯৮১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে যুক্ত হন এ পেশায়।

তিনি বলেন, আগামী বছর আমার ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। প্রতি মাসে কোচিংয়ের জন্য তাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বেতন আর দৈনিক ১০০ টাকার হাতখরচ দিতে হয়। ছেলেকে এত খরচ দেওয়া এখন আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই গত সপ্তাহে ছেলেকে বলে দিয়েছি, আগামী মাস থেকে আর কোচিংয়ে না যেতে।

আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, হালের জীবনব্যবস্থা ও প্রতিকার

একই পরিস্থিতি রাজধানীর ফুটপাতের পানি বিক্রেতা মো. ওয়াসিমেরও। তিনি অর্থাভাবে তার নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলেকে প্রয়োজনীয় বই কিনে না দিতে পারায় মানসিক কষ্টে ভুগছেন।

ওয়াসিম জানান, সম্প্রতি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এমনিতেই দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে তাঁর; এর মধ্যে বৃষ্টি ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে।

ঢাকার সায়েদাবাদের একটি আবাসিক হোটেলে থাকেন ওয়াসিম। আর তিন ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী থাকেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙা ইউনিয়নের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে পাওয়া ঘরে।

ওয়াসিমের বড় ছেলে মো. লাবিব বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণিতে আর মেজ ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট ছেলের বয়স দুই বছর। ছেলেদের পড়ালেখা, যাতায়াত ও টিফিন খরচ মিলিয়ে মাসে লাগে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা।

তিনি বলেন, এত দিন মাসে যা আয় হতো, তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার খরচ চালিয়ে নিতেন। কিন্তু এখন সেটি পারছেন না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সংসার খরচে টান পড়েছে। তাতে অনেক খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। উল্টো মাঝেমধ্যে ধারদেনা করতে হচ্ছে।

এদিকে দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে, কিন্তু বাড়ছে না আয়। সংসারের খরচ সামাল দিতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের তো চালের উৎপাদন ভালো হয়েছে, তাহলে তো চালের দাম বাড়ার কথা না। তেলের দাম না হয় বুঝলাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বেড়েছে? আসলে আমাদের ৫০-৬০টি চালকল এত বড় তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন বলেন, এটাকে আমি সিন্ডিকেট বলব না। ধানের বড় একটা অংশ তারা ভাঙায়, ফলে তারা যে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে সেটাতেই বিক্রি হচ্ছে৷ এখানে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। কতিপয় মানুষের কাছে বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে তারা তো মুনাফা করতে চাইবেই। পাশাপাশি তেলে দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ