মাদক খাওয়া যেমন খারাপ, স্মার্টফোনে আসক্তিও তেমন খারাপ: ড. জাফর ইকবাল
ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমরা সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছি শিশুদের লেখাপড়ার কষ্ট থেকে বের করে নিয়ে আসার, আর তারা যেন আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করে তা। শেষ পর্যন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পড়াশোনায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমে গেছে। যখন করোনা ছিল তখন ক্লাস করতে হয়েছে অনলাইনে, শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন দেওয়ার কথা ছিল না, তারপরও দেওয়া হয়েছে ক্লাস করার জন্য। তখন তো ক্লাস, পড়াশোনা করেছে, পাশাপাশি আর একটা ঘটনা ঘটে গেছে। সেটা হচ্ছে তোমরাই স্মার্টফোনে অভ্যস্ত হয়ে গেছো। এখন স্মার্টফোন না দেখলে ভালো লাগে না। মনে রাখতে হবে স্মার্টফোন তুমি ব্যবহার করছো, নাকি স্মার্টফোন তোমাকে ব্যবহার করছে। মাদক খাওয়া যেমন খারাপ, স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়া তেমন খারাপ।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘এসো বিজ্ঞান শিখি, প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ সভায় এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. জাফর ইকবাল।
বানর থেকে মানুষ হয়েছে, এটা ভুল কথা বলে মন্তব্য করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় গিয়ে তাকিয়ে থাকো বানরের দিকে, দেখতো বানরটা মানুষ হয় নাকি? ফুরুত করে একটি বানর মানুষ হয়ে গেলো? যদি বানর থেকে মানুষ হতো তাহলে এটা হতো, একটা বানর বাচ্চা দিয়েছে, চারটা বাচ্চা, একটা মানুষের বাচ্চা, এটা কি হয়? হয় না। কাজেই যখন কেউ বলে বানর থেকে মানুষ হয়েছে, এটা আসলে সত্যি কথা না। ইভোলিউশন এটা বলে না।
তিনি বলেন, ইভোলিউশন বলে বিবর্তনের একটা জায়গা থেকে একটা ব্রাঞ্চ বানর হয়েছে, একটা ব্রাঞ্চ শিম্পাঞ্জি হয়েছে, একটা ব্রাঞ্চ গরিলা হয়েছে, একটা ব্রাঞ্চ ওরাংওটাং হয়েছে, একটা ব্রাঞ্চ মানুষ হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে। হোমো ইরেকটা নামে একটা গ্রুপ আছে, সেটা থেকে একটা গ্রুপ হয়েছে হোমো স্যাপিয়েন্স। তারা হচ্ছে আমার পর্ব গ্রুপ। কাজেই বানর থেকে মানুষ হয়েছে এটা বইলো না। কোনো একটা প্রজাতি থেকে বানর হয়েছে। হঠাৎ করে একটি বানর যদি মানুষ হয়ে যেতো তাহলে, মানুষ একদিন বানর হয়ে যেতো।
শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকরা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন জোগাড় করতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন কোনো মা তার শিশুকে নিয়ে আসতো, বাচ্চাকে নিয়ে আসতো, আমার কাছে বলতো যে, আমার সন্তান জিপিএ-৫ পেয়েছে, আমি খুব খুশি হতাম। পরে আমি আস্তে আস্তে খবর পেলাম জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য বাচ্চাদের একটা কোচিং ক্লাসে পাঠায়, আরেকটা কোচিংয়ে পাঠায়, সেখান থেকে আরেকটা কোচিংয়ে পাঠায়। বাসায় প্রাইভেট টিউটর দিয়ে পড়াশোনা করায়। কেউ গাইড বই কিনে দেয়। মাঝখানে একটা বিপদ শুরু হয়েছিল প্রশ্ন ফাঁস হতো। মা-বাবারা সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বাচ্চাদের দিতো। তারপর পরীক্ষা দিতে যাইতো।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. জাফর ইকবাল বলেন, দেশে একসময় টাকা-পয়সা ছিল না, এখন টাকা-পয়সা বাড়ছে। আমরা নিজেরাই সেটা টের পাই। বাংলাদেশ তার নিজের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু করেছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ অনেক বড় হয়ে যাবে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশ হবে। তখন আমরা হয়তো থাকবো না, কিন্তু স্বপ্ন দেখি, তোমরা বড় বড় সায়েন্টিস্ট হবে, বড় বড় বিজ্ঞানী হবে, বড় বড় ডাক্তার হবে, বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমেরিকা থেকে লোক আসবে তোমাদের কাছে। তারা জিজ্ঞেস করবে, আমরা স্পেসশিপ বানাবো, কীভাবে বানাবো? তখন তোমরা বানিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, মানুষের সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে লেখাপড়া। আর পড়াশোনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। যে দেশে মানুষের মধ্যে জ্ঞান আছে, তারা সবচেয়ে বড়লোক। টাকা-পয়সা, অস্ত্র কিংবা খনিজ সম্পদ থাকলেই মানুষ বড়লোক হয় না। মন দিয়ে পড়াশোনা করলে মানুষ সম্পদে পরিণত হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র অবারিত বাংলার সহযোগিতায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের সভাপতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও চলতি বছরে একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সহধর্মিণী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।