‘সরকার রোহিঙ্গাদের দেশে থাকতে দেয়, আর আমাদের উচ্ছেদ করে’
‘সারা দিন কাজ করে যা পাই তা দিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে কোনোভাবে চলে। সরকারি জমিতে ঘর তুলে থাকতাম, আজ সে ঘরটিও কেড়ে নিল। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছি।সরকার লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে থাকার জায়গা দিয়েছে, আর আমাদের মতো ছিন্নমূলদের উচ্ছেদ করেছে।’ এভাবেই কাতর স্বরে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর সুখীরাম।
সোমবার (২৩ মে) বরগুনা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন পুকুরপাড় এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমিতে অবৈধভাবে বসবাস করা অর্ধশত পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়।
জানা গেছে, ৩০ বছর ধরে বরগুনা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন পুকুরপাড় এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমিতে বসবাস করে আসছিলেন সুখীরামসহ অর্ধশত পরিবার। তবে হঠাৎ করে আজ সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। ফলে এখানে বসবাস করা ৭০-৮০ পরিবারের শতাধিক মানুষ আশ্রয় হারিয়ে পথে বসেছে।
রিকশাচালক জামাল হোসেন বলেন, আমি গত ২৫-৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। আমার আরও কোথাও জায়গা-জমি নেই। আমি এখন কোথায় থাকব? রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। সরকার যেন আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সেই দাবি জানাচ্ছি।
রোকেয়া বেগম নামে আরেকজন বলেন, ৪০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। ঝাড়ুদারের কাজ করে সন্তানদের বড় করেছি। সম্বল বলতে এই একটা ঘরই ছিল। আজ তাও ভেঙে নিয়ে গেল। এখন কোথায় থাকব?
আরেক ভুক্তভোগী খোকন মিয়া বলেন, আমাদের মধ্যে যারা মোটামুটি সচ্ছল তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু ছিন্নমূলরা কী করবে? অনেকের চুলায় আজ আগুন জ্বলবে না। তাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, এখনকার পরিবারগুলো অবৈধভাবে সরকারি জমিতে বরবাস করে আসছিল। তবে এদের মধ্যে যদি প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীন থেকে থাকে, তাহলে তারা আবেদন করলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে।