১৮ মে ২০২২, ১৫:৫৬

ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেট

ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেট  © টিডিসি ফটো

সিলেটে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে। উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি আর দেশের ভেতরের অতি বৃষ্টির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর অনেক এলাকাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলা শহর থেকে। সুরমা নদীর পানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে প্রবেশ করতে শুরু করে সিলেট নগরীতেও।

এতে নগরীর নিচু রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী মাছিমপুর ও নগরীর অভিজাত পাড়া হিসেবে পরিচিত উপশহর এখন পানিবন্ধী। নতুন নতুন এলাকা ও নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারতের উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বীজতলা ও শত শত একর উঁচু জমির বোরো ফসল। বিভিন্ন পুকুর ও ফিশারীর মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে  কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় মানুষজন। 

কাঁচা/আধাকাঁচা অনেক ঘরের ক্ষতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দে আসার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। অনেক মাদ্রাসা ও স্কুলে  বন্যার পানি উঠার ফলে শ্রেণী কক্ষে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: বন্যা তাতে কী, ভেলায় চড়ে বিয়ে করতে চললেন পাত্র (ভিডিও)

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি

কানাইঘাটঃ সিলেটের কানাইঘাটে বন্যার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। বন্যার পানিতে অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বন্যায় ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার লাখো মানুষ। অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্র সহ উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকা গত সোমবার (১৬ মে) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিদর্শন করেছেন কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার।

সিলেট সদরঃ সিলেট সদরের অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। উপজেলার মোগলগাও ইউনিয়ন অন্তভূক্ত নদীর তীরবর্তী অনেক এলাকায় বন্যার পানি ঘরবাড়িতে উঠেছে।

জৈন্তাপুরঃ জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অনেক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলায় ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। 

গোলাপগঞ্জঃ গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন, বাদেপাশা ইউনিয়ন, শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন সহ উপজেলার অনেক নিম্নাঞ্চলে ঘরবাড়িতে পানি ওঠেছে।পানিবন্দী হয়েছে হাজারো মানুষ। 

বিশ্বনাথঃ বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ও খাজাঞ্চি ইউনিয়নের অনেক নিম্নাঞ্চল এলাকার ঘরবাড়িতে পানি উঠায় ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পরেছে।

সিলেটকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

সিলেটকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবির পাশাপাশি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ডিজিটাল সাংবাদিকতার স্মারক প্রতিষ্ঠান সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব। মঙ্গলবার রাতে প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের এক সভায় এ আহবান জানানো হয়।

সভায় বলা হয়, সিলেট নগরী ও জেলার সবকটি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে।অধিকাংশ গ্রাম ও অসংখ্য ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে মানুষ ও জনপদ। দেখা দিয়েছে খাবার ও আবাসন সংকট। তাই অসহায় পানিবন্দী বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়াতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

ক্লাব সভাপতি মুহিত চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ মকসুদের পরিচালনায় ক্লাবের ড. রাগিব আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, ক্লাবের সহ সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মুহিত দিদার, কার্যকরী পরিষদ সদস্য আশীষ দে, সাইফুল ইসলাম ও মাহমুদ হোসেন খান প্রমুখ।

সভায় অবিলম্বে সিলেটের পানিবন্দী উপজেলা গুলোকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে বন্যর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়। সভায় ক্লাবের উন্নয়ন ও সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।