ধর্ম যার সেটি থাকবে, কিন্তু উৎসব ও আমেজ সবার: ঢাবি উপাচার্য
বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ স্বাগত জানিয়ে আনন্দ ও উদ্দীপনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বরের স্মৃতি চিরন্তন ভাস্কর্য প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল- ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। তবে করোনার মহামারির আগে মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হতো। পরে মৎস্য ভবন ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হতো। কিন্তু এবারে করোনা মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে সকাল ৯টার আগেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিএসসিতে জড়ো হওয়া শুরু করেন। নারীরা হলুদ শাড়ি, পুরুষরা লাল পাঞ্জাবি পরে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। ঢোল-ঢাকের তালে তালে কেউ নেচেছেন। এ সময় মাছ, পাখি, ট্যাপা, ঘোড়া, পুতুল, মুখোশ ও অন্যান্য শিল্পকর্ম শোভাযাত্রায় স্থান পায়। এদিকে শোভাযাত্রা ঘিরে নেয়া হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
শোভাযাত্রা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ বিনির্মানে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর পর পহেলা বৈশাখ-১৪২৯ অনুষ্ঠান তার প্রাণ চাঞ্চল্য, উৎসব ও আমেজের চিরাচরিত ছোঁয়া ফিরে পেয়েছে বলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত উৎসব। এটি সব জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের একটি প্রাণের জায়গা, সাধনার জায়গা, সম্পৃক্ততার জায়গা। ধর্ম যার যার সেটি থাকবে; কিন্তু উৎসব ও আমেজ সবার। মানুষের মধ্যে ধর্মের সম্প্রীতি, মানবিক বন্ধন সুদৃঢ় হোক সেই প্রত্যাশা করি।’
আরো পড়ুন: বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে ঢাবিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমরা দুই বছর আমাদের উৎসবটি করতে পারিনি। দুই বছর পর আমরা আবার আমাদের প্রাণের মেলা, হৃদয়ের উৎসবে হাজির হয়েছি। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যে শত্রুর বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি, সেই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য এই পহেলা বৈশাখ দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমাদের এই ঐতিহ্যময়ী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা জঙ্গিবাদ ও অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।