গণপরিবহনে নারীদের হয়রানির নেপথ্যে পুরুষের বিকৃত মানসিকতাই দায়ী
নারী মানেই শক্তি, নারী মানেই প্রেরণা। যদিও বাংলাদেশ নারী অগ্রযাত্রায় মাইলফলক অতিক্রম করেছে, তবুও তাদের হয়রানি যেন লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। গৃহস্থালী থেকে কর্মক্ষেত্র, অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই উঠে আসে এমন অভিযোগ।
বেসরকারি সংস্থা আঁচলের এক সমীক্ষার তথ্য বলছে, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ নারী। এই সংখ্যাটি অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর হয়রানির মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৩.৮৯ শতাংশ নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। সারা দেশের এক হাজার ১৪ জন তরুণী সম্প্রতি এই সমীক্ষায় অংশ নেন।
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লাভ ফর হিউম্যান বাংলাদেশ (এলএফএইচবিডি)’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে গণপরিবহনে নারী নিরাপত্তা শীর্ষক এক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন জিহাদের, ইচ্ছা মানুষের সেবা করা
ক্যাম্পেইনে জনসচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীদের থেকে গণপরিবহনে নারী নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রায় ৩ শতাধিক নারী এই ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের মতামত প্রদান করেন।
ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী নারীদের অধিকাংশই গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য পুরুষের বিকৃত মানসিকতাকে দায়ী করেন। গণপরিবহনে নারী যাত্রী হয়রানির প্রতিকার হিসেবে রাজধানীতে নারী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের জন্য পর্যাপ্ত বিশেষ পরিবহন সেবার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। তবে গণপরিবহনে চূড়ান্তভাবে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নারীদেরও থাকতে হবে প্রতিবাদের সাহস। এমন মতামতও উঠে এসেছে জরিপে।
‘লাভ ফর হিউম্যান বাংলাদেশ’ এর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ঋতু রায় বলেন, রাজধানীতে অধিকাংশ নারীই প্রত্যাহিক যাতায়াতে গণপরিবহন ব্যবহার করেন। তাই সবার আগে নারীদের হতে হবে সাহসী। পাশাপাশি সহযাত্রী হিসেবে থাকা পুরুষটিরও থাকতে হবে দায়িত্ববোধ। তবেই গণপরিবহনে নিশ্চিত হবে নারী নিরাপত্তা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি বলেন, গণপরিবহণে হয়রানি আমাদের দেশের নারীদের জন্য অন্যতম বড় এক আতঙ্ক এবং সমস্যার নাম। নারীর স্বাবলম্বীতার পথে এটা একটা বিরাট বাঁধা। রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলার চূড়ান্ত প্রয়োগ তো বটেই, পাশাপাশি এ সমস্যা নিরসনে ব্যক্তি পর্যায় থেকেও আসতে হবে সচেতনতা এবং প্রতিবাদ করার মনোভাব। বিশেষ করে, তরুণদের মাঝে এ বিষয়ে জোরালো সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, গণপরিবহণে নারীর প্রতি হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘লাভ ফর হিউম্যান বাংলাদেশ’ এর স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীদের কার্যক্রম প্রশংসনীয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন সচেতনতা জাগ্রত হলে, এ দেশের রাস্তাঘাট নারীদের জন্য অচিরেই নিরাপদ হয়ে উঠবে।