নিহত নাবিকের বাড়িতে মাতম, দেশে ফিরলেই ছিল বিয়ের সিদ্ধান্ত
ইউক্রেনের বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলায় নিহত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের বাড়িতে চলছে মাতম। বুধবার (০২ মার্চ) রাত ১১টার দিকে হাদিসুরের নিহত হওয়ার খবর পান স্বজনরা। হাদিসুরের বাড়ি বরগুনা বেতাগী উপজেলার ৩ নম্বর হোসনাবাদ ইউনিয়নে। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
নিহতের চাচা বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, আমার চাচাত ভাই মাদ্রাসাশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে হাদিসুর। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে লেখাপড়া করে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন তিনি।
বুধবার রাত ১০টার পর ইউক্রেন থেকে ওই জাহাজে থাকা নাবিকরা হাদিসুর রহমানের বাড়িতে ফোন করে তার নিহতের খবর জানায়। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, নিহত হাদিসুর রহমানের বয়স ৩৩।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, এক নাবিক নিহত
‘‘পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এবার বাড়ি ফিরলে তাকে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন দুশ্চিন্তায় আছি হাদিসুরের মরদেহ দেশে কীভাবে আনব। যুদ্ধের কারণে যেখান থেকে জাহাজই বের হতে পারছে না, সেখানে হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে আসাটা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।’’
এদিকে, হাজাজে থাকা বাকি নাবিকরাও রয়েছেন বেশ শঙ্কায়। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তারা নিজেদের উদ্ধারের আবেদন জানিয়েছেন। আসিফুল ইসলাম নামে এক নাবিক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি আসিফুল ইসলাম আসিফ।...আমরা নাকি পোল্যান্ডে চলে গেছি নিরাপদভাবে। এটা ভুল নিউজ। আমাদের প্লিজ এখান থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।’
আরও পড়ুন: জাহাজ থেকে বাংলাদেশি নাবিকের আকুতি ‘আমাদের বাঁচান’ (ভিডিও)
এর আগে, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ইউক্রেনের বন্দরে থাকা পণ্যবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাকি ২৮ জন নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামে জাহাজটি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায়। দুই দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছায় এটি। এ সময়ে ইউক্রেন পরিস্থিতির অবনতি হলে শিপিং করপোরেশনের নির্দেশে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানেই জাহাজটিকে অবস্থান করতে বলা হয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান জানান, ইউক্রেন জলসীমায় অবস্থান করলেও, ওই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আসতে পারছে না। জাহাজটিতে ২৯ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন।