ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষা-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।’
আগামীকাল ২১ ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২’ উপলক্ষে আজ রবিবার দেওয়া বাণীতে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যুগে যুগে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।’
ভাষা আন্দোলনে শহীদের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৫২ সালের এদিনে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ আরও অনেকে।’
বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষা-শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষাসৈনিকদের, যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।’
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপদান করতে শেখ মুজিব দেশব্যাপী সফরসূচি তৈরি করে ব্যাপক প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার গ্রেফতার হয়ে জুলাই মাসে মুক্তি পান। এরপর তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হলে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান।
‘‘শেখ মুজিব ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থেকেও ভাষাসৈনিক ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন এবং আন্দোলনকে বেগবান করতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ১৯৫২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনজন দূত মারফত খবর পাঠান, ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল ডাকতে হবে এবং মিছিল করে ব্যবস্থাপক পরিষদের সভাস্থল ঘেরাও করতে হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিল শেষে এ ঘোষণা জানিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে শেখ মুজিব আমরণ অনশন ঘোষণা করলে ১৬ ফেব্রুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরিত করে।’’
আরও পড়ুন: গুণীজনরাই আমাদের পথ দেখান: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশনের জন্য নির্ধারিত ছিল। শেখ মুজিবের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী ওই দিন সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মুসলিম লীগ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি এবং সব প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে এবং সেখানে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে কতগুলো তাজা প্রাণ নিমেষেই ঝরে যায়, অনেকে আহত হন, অনেকে গ্রেফতার হন। প্রাদেশিক পরিষদের কয়েকজন সদস্য অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। নিরুপায় হয়ে সরকার সেনাবাহিনী তলব করে, কার্ফু জারি করে এবং প্রাদেশিক পরিষদে বাংলা ভাষার প্রস্তাব গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা সব দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বাংলায় জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন।’
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অচিরেই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করব।’