পরিবারকে সমাজচ্যুত, মুচলেকা দিল সেই মসজিদ কমিটি
মেয়েকে বিদেশ পাঠানোয় মৌলভীবাজারের কুলাউরায় ‘সমাজচ্যুত’ পরিবার ও ‘সমাজচ্যুত’ করা স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বৈঠকে বসেন তারা।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ দেব, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সমাজচ্যুতির অভিযোগ তোলা ঝর্ণা চৌধুরীর বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের মসজিদের সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়া।
আরও পড়ুন: মেয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ায় পরিবারকে সমাজচ্যুত
পরে ইউএনও জানান, আলোচনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে মসজিদ কমিটি। মেয়েটির বাবাও তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে মসজিদ কমিটির কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, তারা বয়স্ক মানুষ, তাই ইন্টারনেট চালাতে পারেন না।
“এলাকায় রটে যায় যে ঝর্ণা একটি হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছে। তাই তার বাবাকে তারা (মসজিদের সভাপতি ও সম্পাদক) ডাকায়, কিন্তু উনি না আসায় তারা বলেন যে উনি উনার মতো চলুক, আমরা আমাদের মতো চলব।”
ইউএনও আরও বলেন, তবে আজ তারা ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঝর্ণার বাবার কাছে। সেই সঙ্গে মুচলেকা দিয়েছেন যে ফিউচারে আর এমন কিছু করবেন না। ঝর্ণার পরিবারও খুশি হয়েছেন, তারাও লিখিত দিয়েছেন যে তারা এখন খুশি।
এর আগে ইউএনওর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল হাই চৌধুরী। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, তার বড় মেয়ে নুরুননাহার চৌধুরী ঝর্না সিলেট নগরের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। তিনি গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যান। নুরুননাহার ২০০৮ সাল থেকে ‘পজিটিভ জেনারেশন অব সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি ওই সংগঠনের সমন্বয়ক। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত একই সংগঠনের চেয়ারম্যান ও নুরুননাহারের শিক্ষক জয়তূর্য চৌধুরী বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে জয়তূর্য একটি ছবি পোস্ট করে নুরুননাহারের যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এই ছবি দেখে এলাকার লোকজন নুরুননাহারকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকেন। ভাটেরা বাজার জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির কিছু লোক নুরুননাহারের বাবাকে ঘটনার বিচারের জন্য ডেকে পাঠান। আবদুল হাই চৌধুরী পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক আমিন মিয়ার সঙ্গে দেখা করে বলেন, তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। যা বলা হচ্ছে তা মিথ্যা। তাঁর পক্ষে পঞ্চায়েতের বিচারে যাওয়া সম্ভব নয়। এরপর ২৮ জানুয়ারি পঞ্চায়েতের সভায় আবদুল হাই চৌধুরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়া হয় বলে অভিযোগে তরুণীর বাবা আবদুল হাই চৌধুরী উল্লেখ করেন।